২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৪:৫৮
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৪:৫৮

ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত

যেসব রিকশা ও ভ্যান আগে প্যাডেল দিয়ে চলত কিন্তু বর্তমানে ইঞ্জিন লাগিয়ে চালানো হচ্ছে, সেগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ইজি বাইকও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যা ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি চলতে পারবে না। চালক-হেল্পারদের নিয়োগপত্র দিতে হবে।

গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, টাস্কফোর্সের সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্যাডেলচালিত রিকশা-ভ্যানের মধ্যে ইঞ্জিন লাগিয়ে যারা চালাচ্ছে, সেটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া চালক ও শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মোটরসাইকেলে যাতে দুজনের বেশি চড়তে না পারে সে সিদ্ধান্তও হয়েছে। 

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘রিকশার সামনের চাকায় ব্রেক আছে। পেছনের চাকায় ব্রেক নেই। এগুলোতে ইঞ্জিন লাগিয়ে চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পেছনের চাকায় কোনো ব্রেক নেই কিংবা ব্রেকের ব্যবস্থা থাকলেও অপ্রতুল, সেগুলো যখন ব্রেক করে প্যাসেঞ্জারসহ গাড়ি উল্টে যায়। এ দৃশ্য আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি হাইওয়েতেও এ রিকশা চলে এসেছে। সে জন্য সারা দেশে, এ ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশাকে যারা ইঞ্জিন দিয়ে রূপান্তর করেছে, সেই সব রিকশা-ভ্যান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আজকের সভায় হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নছিমন, করিমন, ভটভটির মতো যানবাহনের সঠিক ব্যবস্থা করতে পারিনি। গ্রাম-গ্রামান্তরে আপনারা গেলে দেখতে পাবেন সুন্দর রাস্তা হয়েছে। এখনো হাঁটা ছাড়া, সাইকেল, রিকশা, মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো যানবাহন পর্যাপ্ত নেই। সে জন্য নছিমন, করিমন—এগুলো পণ্য পরিবহন বা যাত্রী পরিবহনের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।’ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগির এটাকে পরিমিত করা এবং ফাইনালি বন্ধ করা যায় কি না সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা সেখানেও কাজ করব।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যায় মোটরসাইকেলে তিনজন-চারজন করে উঠছে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। মোটরসাইকেলে কোনোক্রমেই দুজনের বেশি যাতে চড়তে না পারে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

ক্রমান্বয়ে ইজি বাইক বন্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইজি বাইকের যে কথা বলছেন, ইজি বাইক যথেষ্ট পরিমাণে এসেছে। ছোট ছোট গলিতে এসব চলার কথা ছিল, সেভাবে আসছিল। এখন সর্বত্র বিচরণ করছে।’ ১৩ হাজার মোটরচালিত রিকশা, ভ্যান ধ্বংস করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ইজি বাইককে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তারা যেন তাদের নির্ধারিত স্থান থেকে বের না হতে পারে। হাইওয়ে কিংবা বড় রাস্তায় না আসতে পারে। ক্রমান্বয়ে এটাও বন্ধ করে দেব।’

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা খুব বেড়েছে বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট নেই। দুর্ঘটনা হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটার অনেক কারণ আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

মালিকরা চালক-হেল্পারদের নিয়োগপত্র দেবেন, সেটি তো ছয় মাস আগের সিদ্ধান্ত। নতুন করে কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মালিকদের নিয়োগপত্র দিতে হবে বলে আলোচনা হয়েছে। তবে অনেক জটিলতাও আছে। ড্রাইভার, শ্রমিকরা যেকোনো সময় জায়গা পাল্টায়। নানা ধরনের কথাবার্তা আসছে।’

গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল পৌনে ৩টা পর্যন্ত এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, মসিউর রহমান রাঙ্গা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।

Facebook
Twitter
LinkedIn