২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / ভোর ৫:৪০
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / ভোর ৫:৪০

ভাল নেই শহরের বেওয়ারিশ কুকুর

সংক্রামক অজানা পঁচা চর্ম রোগে চলছে ওদের মৃত্যুর মিছিল

সত্যি, রাজধানীর বেওয়ারিশ কুকুর গুলোর জীবন বড়ই বিপন্ন। ভাল নেই ওরা। সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীন প্রায় প্রতিটি এলাকাগুলোতেই কুকুরগুলো এই অজানা চামড়া পঁচা রোগে ধুকছে। অনেক কুকুর ইতিমধ্যে মারাও গেছে। নগরীর চায়ের দোকান। গরুর গোশতের দোকন। ব্রয়লার মুরগির দোকান গুলোতে গেলে কোন কোন কুকুরে গায়ে আপনি একটা ক্ষত দেখতে পাবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির অন্তর্গত মাদারটেক মসজিদ গলিতে শামসু ভাইয়ের দোকানের সামনে ক’দিন আগে ইয়া তাগড়া বড় একটি কুকুর মারা গেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। এই এলাকারই কুকুর ভালোবাসেন লালবানু আপা, উনারও একটি কালো মেয়ে কুকুরের এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। রোগটি অজানা। এবং এ বছরই এটা কুকুরের মহামারীর মতো নানান জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকায় এখন পশুদের অনেক রেসকিও টিম, সংগঠন আছে। এদের গাড়ি গুলোও দেখা যায় কালেভদ্রে। এদেরকেও বিষয়টি আমলে নিয়ে, অবলা কুকুরগুলোর চিকিৎসার প্রতি আরও একটু যত্নবান হওয়া প্রয়োজন বলে অনেক কুকুরপ্রেমীরা মনে করছেন। এই রোগে আক্রান্ত কুকুরগুলোর খাওয়ার ইচ্ছেটা কমতে থাকে। ওরা নিরিবিলি গিয়ে শুয়ে থাকতে চায়। শরীরে ঝিঁমুনি থাকে। শক্তি কমে আসে। শরীর ধীরে ধীরে শুকিয়ে ওরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

পশুপ্রেমীরা বলেন, কুকুরের প্রজনন ক্ষমতা কমাতে সিটি কর্পোরেশন যে লার রঙটি ওদের গায়ে মেখে দিচ্ছে, হয়ত এর প্রভাবেই ওদের শরীর এমন কোন স্কীন ডিজিজ হয়ে থাকতে পারে।

একেকেটি কুকুর শরীরের চামড়ায় ক্ষত নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে শুধু ছুটতেই থাকে।শরীরের ছোট্ট ক্ষতটিই ধীরে ধীরে  বড় আকার ধারণ করছে। একসময় কুকুরটি আর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পৃথিবীকে চিরবিদায় জানাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের এই লাল রঙের ওষুধটি নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে। এছাড়াও বংশ, প্রজনন কমানো আর পাগলা কুকুর নিধনে সিটি করপোরেশনকে আরও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করারও সুপারিশ জানায়, পরিবেশ ও পশুপালন বিষয়ক মহল ।  

শহরের অসহায় কুকুর গুলো চামড়ায় ক্ষত বয়ে মানুষের ধুরধুর তাড়ার ওপরই কাটাচ্ছে। এবং কোনমতে জীবনের শেষসময়টুকু পাড় করছে। ক্ষত যত বড় হয়ে থাকে। ওদের শরীর ততো পঁচতে থাকে। পুজ জমে দুর্গন্ধ ছড়ায়। দোকান পাট বাসা বাড়ির সিড়িতে নিরিবিলিতে কুকুরের একটু বিশ্রামের সুযোগ মানুষ দিচ্ছে না। কেননা, প্রচন্ড দুর্গন্ধ বের হয় বলেই এই সাময়িক পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কুকুরকে তারা যে ভালোবাসে না তা নয়। সুস্থ সবল থাকতে এই কুকুরকেই অনেকে রুটি বিস্কুট ভাত মুরগির পা মাথা কিন্তু খেতে দিয়েছে।

শহরে পশু ডাক্তার পাওয়াও যেন আকাশের চাঁদ। আর অবলা প্রাণী তো আর পশু হাসপাতাল চেনে না। তারপরও পশুপ্রেমী অনেক আপুরা ওদের খাবার দেন। ঘা শুকাবার নানান পাওডার ছিটিয়ে দেন। আবার অনেকে হলুদও মেখে দিচ্ছে কুকুরগুলোর ক্ষত চামড়ায়।

ভালোবাসার কাছে কুকুরের চামড়া পঁচা দুর্গন্ধ এমন মানবিক মানুষগুলোর কাছে যেন নগন্য !

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

Facebook
Twitter
LinkedIn