ভেঙে দেওয়া হচ্ছে জাতীয়তাবাদী যুবদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গ সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব যে কোনো সময় ঘোষণা হতে পারে। এবার সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে ‘সুপার ফাইভ’ কমিটি দেওয়া হবে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবেন
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের আগে দলকে সংগঠিত করার অংশ হিসাবে যুবদলের নতুন কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি সংগঠনটির সাবেক কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতার মতামত নেন। তারা যুবদলের বর্তমান ও সাবেক ছাত্রনেতাদের নাম প্রস্তাব করেছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, কমিটি গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সে অনুযায়ী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে পুনর্গঠন কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবদলের কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামত নেন তারেক রহমান। বেলা ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৫১ জন নেতা পৃথকভাবে ভার্চুয়ালি মতামত দেন। তবে এই মতামত প্রক্রিয়ায় যুবদলের বর্তমান কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে রাখা হয়নি।
মতামত দেওয়া একাধিক নেতা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের কয়েকটি প্রশ্ন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন হলো-সাংগঠনিকভাবে যুবদলকে কীভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে? এক্ষেত্রে বর্তমান কমিটি রেখে, নাকি নতুন কমিটি করতে হবে? নতুন কমিটিতে কাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে যোগ্য মনে করেন? বেশিরভাগ নেতাই নতুন কমিটির পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি সাইফুল আলম নিরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পর ১১৪ সদস্যের আবার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় ওই কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যক্রম।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেয় হাইকমান্ড। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কার্যক্রম শুরু করেন। সারা দেশে থানা-উপজেলা-পৌর, এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই সময় যুবদলকে ঢেলে সাজাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে পৃথক এগারোটি টিম গঠন করে। এতে ‘এক নেতার এক পদ নীতি’ যেমন মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়, তেমনি স্থানীয় সক্রিয় ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়নের জন্য বলা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সে নির্দেশনা মানা হয়নি বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের। সংগঠনটির বিভাগীয় অনেক টিমের বিরুদ্ধেই আর্থিক কেলেঙ্কারি, উপঢৌকন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির হাইকমান্ডও। যে কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ আংশিক কমিটিকে আর পূর্ণাঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ পদে আলোচনায় যারা : এদিকে যুবদলের নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদ পেতে লবিং-তদবির করছেন এক ডজনেরও বেশি নেতা। তারা সবাই বর্তমান যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক শীর্ষ নেতা। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে যুবদলের বর্তমান সভাপতি সাইফুল আলম নিরব থাকছেন না। ত্যাগী ও পরীক্ষিত এই নেতাকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন- সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মোনায়েম মুন্না, আলী আকবর চুন্নু, মাহবুবুল হাসান ভূইয়া পিংকু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। এছাড়াও সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যুবদলের শীর্ষ দুই পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন-ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সাবেক সভাপতি রাজিব আহসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও ইসহাক সরকার।
জানতে চাইলে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু যুগান্তরকে বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সারা দেশে যুবদলকে সংগঠিত করতে কাজ করেছি। এখন হাইকমানন্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে তা মেনেই রাজনীতি করব।
নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। নতুন কমিটি হলে তিনি যোগ্য, ত্যাগীদেরই জায়গা দেবেন।
এসএম জাহাঙ্গীর বলেন, আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে ছিলেন এবং থাকবেন তাদের দিয়েই নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আকরামুল হাসান বলেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি করার একটা রেওয়াজ রয়েছে। যারা যোগ্য ও ত্যাগী তাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি হবে বলে আশা করি।