২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১০:৪৩
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১০:৪৩

ভোজ্যতেলের দাম মানছে না ব্যবসায়ীরা

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না দেশের ভোজ্যতেলের বাজার। নিম্ন-মধ্যবিত্তের পাশাপাশি এখন মধ্যবিত্তদেরও নাভিশ্বাস অবস্থা। সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও কেউ তা মানছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি, আসন্ন পবিত্র রমজান ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরিস্থিতিকে ইস্যু করে মিল মালিক, ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও মূল্য কারসাজি করার কৌশল অবলম্বন করেছে। অতি মুনাফার উদ্দেশ্যে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভোজ্যতেলের সরবরাহ সঙ্কোচনের ফলে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কর্তৃক ভোজ্যতেলের উৎপাদন, বিপণন ও সরবরাহ সংক্রান্ত তদারকির কার্যক্রমের প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে গত ৯ মার্চ পাইকারি ব্যবসায়ী, ডিলার ও মিলমালিকদের সাথে মতবিনিয়ম করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সভায় মৌলভীবাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ডিলার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ভোজ্যতেলের মিলগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল সরবরাহ করছে না। বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরিতে সাপ্লাই অর্ডার করলে দীর্ঘদিন ট্রাক অপেক্ষমাণ অবস্থায় থাকে, যা ডেলিভারি পেতে কমপক্ষে ১৫ থেকে এক মাস লাগে। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নেয়া হয়। মিল থেকে তেল নেয়ার সময় সাপ্লাই অর্ডারে পণ্যের একক মূল্য লেখা থাকে না। মিল গেটের বাইরে তেলে ট্রাকের সিরিয়াল নিতে হলে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। অন্যথায় দিনের পর দিন সিরিয়ালের জন্য ট্রাক বসিয়ে রাখা হয়। সভায় ভোজ্যতেলের মিল মালিক প্রতিনিধিরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পরে এ সব অভিযোগ সরেজমিন তদারকির জন্য মাঠে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ১০ মার্চ সিটি এডিবল ওয়েলের মিলে গিয়ে তারা দেখতে পান সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ সাপ্লাই অর্ডার রয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১-এর অনুচ্ছেদ ৯(১) অনুযায়ী সংযুক্ত এসও ফরমের (ফরম-ঘ) ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। খোলা সয়াবিন ও পামতেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

একই দিনে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের মিলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি খোলা ভোজ্যতেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। শতভাগ কনজুমার প্যাক সরবরাহ করছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি অপেক্ষা মার্চ মাসে ভোজ্যতেলে সরবরাহ কম। এই প্রতিষ্ঠানটিও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১-এর অনুচ্ছেদ ৯(১) অনুযায়ী সংযুক্ত এসও ফরমের (ফরম-ঘ) ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।

১৩ মার্চ টিকে গ্রুপের শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মিলে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায়Ñ সেখানেও মেয়াদোত্তীর্ণ সাপ্লাই অর্ডার রয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি অপেক্ষা মার্চ মাসে ভোজ্যতেলে সরবরাহ উল্লেখ্যযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১-এর অনুচ্ছেদ ৯(১) অনুযায়ী সংযুক্ত এসও ফরমের (ফরম-ঘ) ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। একই দিনে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের মিলে গিয়ে কর্মকর্তারা দেখতে পান, সরকার নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা বেশি মূল্যের কনজুমার প্যাকেট মজুদ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও রিফাইনারি ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ সাপ্লাই অর্ডার পাওয়া গেছে মিলটিতে। ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১-এর অনুচ্ছেদ ৯(১) অনুযায়ী সংযুক্ত এসও ফরমের (ফরম-ঘ)। মিল কর্তৃক সরবরাহকৃত ভোজ্যতেলের ড্রামে তেলের নাম (সয়াবিন/পাম) সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। অপরিশোধিত তেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি অপেক্ষা মার্চ মাসে ভোজ্যতেলের সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ১৬ মার্চ মেঘনা ও ইউনাইটেড এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের মিলে গিয়েও সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ সাপ্লাই অর্ডার পাওয়া যায়। এ বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি অপেক্ষা মার্চ মাসে ভোজ্যতেলের সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০ মার্চ বসুন্ধরা অয়েল রিফাইনারি মিলে গিয়ে প্রতিনিধিদল দেখতে পায় সেখানে খোলা ভোজ্যতেলের কোনো মজুদ নেই। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের কনজুমার প্যাকেট দেখা যায়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি অপেক্ষা মার্চ মাসে ভোজ্যতেলের সরবরাহ উল্লেখ্যযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১-এর অনুচ্ছেদ ৯(১) অনুযায়ী সংযুক্ত এসও ফরমের (ফরম-ঘ) ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।
প্রতিবেদনে ভোজ্যতেলের মিল, ডিলার ও পাইকারি পর্যায়ে অবৈধ মজুদ ও মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য অনিয়ম-অসঙ্গতির বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১০টি সুপারিশ করা হয়।

তাদের সুপারিশগুলো হলোÑ প্রকৃত ডিলার ছাড়া হাত বদল হওয়া সাপ্লাই অর্ডারে পণ্য সরবরাহ না করার বিষয়ে মিলগুলোকে বাধ্য করা। ভোজ্যতেল ক্রয়-বিক্রয়ে পাইকারি থেকে খুচরা সব পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানাসহ রশিদ প্রদান নিশ্চিত করা। মিলগেট, পরিবেশক ও ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ, সঠিকভাবে প্রদর্শন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অবৈধভাবে পণ্য মজুদ ও বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত সব আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল কর্তৃক অপরিশোধিত তেল আমাদনির পরিমাণ, পরিশোধনের পরিমাণ ও পরিবেশকদের নিকট সরবরাহের পরিমাণে সামঞ্জস্য রয়েছে কিনা তা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারি কমিশন নিশ্চিত করতে সরকারকে অবহিত করতে পারে এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কাছে পাঠাবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn