২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ২:৩৫
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ২:৩৫

মনোজ মিত্র : একজন সাংস্কৃতিক অভিভাবকের চলে যাওয়া

মারুফ আহমেদ

থিয়েটার জীবনের একজন নিবেদিত নাট্যগুরু বলা হয় যাঁকে। বিশিষ্ট নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা বিশেষকরে নাট্যগুরু বা শিক্ষক যাই বলি, কম বলা হবে। আজ ভোরে চলে গেলেন সবার প্রিয় মানুষটি। নাট্যচর্চায় বাংলাদেশ ও কলকাতার অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী তৈরি করে গেছেন মনোজ মিত্র। সবাইকে হৃদয় দিয়ে শিখিয়েছেন, কি করে থিয়েটার করতে হয়। নাট্য কর্মশালার একজন সফল প্রশিক্ষক হিসেবে শুধু কাজ করেননি, ছিলেন সবার প্রকৃত অভিভাবক। তাইতো এপার বাংলা ওপার বাংলার সবাই আজ শোকে বিমূঢ়।
মঙ্গলবার’১২ নভেম্বর সকাল ৮.৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স ছিল ৮৬ বছর। অনেকদিন ধরে ছিলেন অসুস্থ। বার্ধ্যক্য পীড়ায় ভুগছিলেন। ছোট ভাই কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র মৃত্যুর বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানান; ‘কলকাতার সল্টলেকের ক্যালকাটা হার্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে হার্ট পাম্পের সমস্যা ধরা পড়ে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণহীন হলে দাদাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
আমরা জানি, মনোজ মিত্রের লেখা ‘সাজানো বাগান’ থেকে তপন সিংহ ‘বাঞ্জারামের বাগান’ খ্যাত যে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন, সেই সিনেমার একজন দক্ষ অভিনেতাও ছিলেন রচয়িতা মনোজ মিত্র। এই ছবিটির মাধ্যমেও তিনি ভক্তকূলের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন। অনন্য প্রতিভার অধিকারী মনোজ মিত্রের জন্ম আমাদের বাংলাদেশে। সাতক্ষীরা জেলার ধূলিহার গ্রামে। এই গ্রামটিতেই মানুষটির শৈশব কেটেছে। ১৯৫০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি কলকাতা চলে যান। বাংলাদেশে আসলেই তিনি গিয়েছেন মাটির টানে নিজভূম সাতক্ষীরাতে। ১৯৫৭ সালে কলকাতার নাট্যমঞ্চে প্রথম অভিনয় করেন। আর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ১৯৭৯ সালে। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী ও কন্যাকে রেখে গেলেন। পেশাগত জীবনে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন মনোজ মিত্র। সবার ভালোবাসা পেয়েছেন। পেয়েছেন বহু একাডেমিক পদক। অসংখ্য সিনেমার সংলাপ ও চিত্রনাট্য লেখার সাথে করেছেন প্রশংনীয় অভিনয়। অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আবির্ভাব, তুফান, হিংসা, দত্তক, ভালোবাসি শুধু তোমাকে, ৬১ নম্বর গড়পার লেন, উমা, প্রেম বাইচান্স, অমর সাথি, আগুন, চক্র, দত্তক ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অনেক থিয়েটারই মনোজ মিত্রের লেখা নাটক নিয়মিত মঞ্চস্থ করেছে। শিল্পকলা একাডেমিতে সব সময় মনোজ মিত্রের ‘চাকভাঙা মধু’ নিয়ে এসেছে থিয়েটার নাট্যবিন্দু। আমরা এপারের বাংলাদেশীরা এই ‘চাকভাঙা মধু’ নাটকটির মাধ্যমে অনেকেই মনোজ মিত্রকে চিনতে পেরেছিলাম। তিনি কতটা জাত শিল্পী ছিলেন। এই নাটকটি হতে পারে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
দুই দেশই মহান একজন সাংস্কৃতিক অভিভাবক হারালো।

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি

Facebook
Twitter
LinkedIn