কোরবানির মাংস বিলি-বণ্টনে-
কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করতে হয়। এ কথা সবাই জানেন। এর এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে ও এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য রাখতে হয়।
কোরবানির মাংস গবির ও আত্মীয়স্বজনদের মাঝে সমানভাগে ভাগ করা ভালো। তবে অবস্থাসম্পন্ন আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে না দিয়ে তা গরিব আত্মীয়দের দেয়া বেশি ভালো।
মাংস পরিমাপের ক্ষেত্রে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করুন। তাহলে ভাগ যে সমান হল- তা নিশ্চিত হতে পারবেন।
সবচেয়ে ভালো- পশুর প্রতিটি অংশের মাংস, কলিজা ও মগজ ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে ফেলা। তারপর তা সমান তিন ভাগে ভাগ করা। যদিও কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা অপরিহার্য নয় তবে এভাবে ভাগ করাটা উত্তম এমনটিই জানিয়েছেন আলেমরা।
অভিজ্ঞ আলেমরা বলছেন, হজরত মুহাম্মদ (স.)কে অনুসরণ করে কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে দেয়া সৌন্দর্যের অংশ। চাইলে পুরোটাই নিজের কাছে রাখা দোষের নয়। তবে গরিব, মিসকিন ও আত্মীয়দের হক আছে এ মাংসে। ইসলামিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মাসিক গবেষণাপত্র আল কাউসারে এ বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া লিখেছেন, ‘কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেয়া উত্তম। অবশ্য পুরো মাংস যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০’।
শুধু মাংস নয়- কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকাতেও হক আছে গরিব-মিসকিনদের। কাজেই আপনি এটি বিক্রি করে সেই টাকা দান করতে পারেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে-
একই কসাইয়ের একাধিক পশু জবাই, মুখে মাস্ক না পরা ও নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব না মেনে মাংস বণ্টন করা ইত্যাদি কারণে এ বছর পশু কোরবানিকে সামনে রেখে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু কেনা, জবাই, মাংস বানানো, বিলি-বণ্টন এবং সংরক্ষণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সরাসরি মাংসতে করোনাভাইরাস না থাকলেও করোনা আক্রান্ত রোগী কিংবা উপসর্গ নিয়ে বা উপসর্গবিহীন কেউ গরুর মাংস ধরলে তার মাধ্যমে মাংসে করোনাভাইরাস থাকার ঝুঁকি তৈরি হবে।
যেখানে পশু কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটাকাটি করা হবে সেখানে কাজের শুরুতে ও শেষে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।
যারা কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটাকাটি করবেন তাদের অবশ্যই হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক এবং পা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে রাবারের জুতা পরতে হবে। কাজ শুরুর আগে ও কাজ শেষে দু’হাতসহ পুরো শরীরের অনাবৃত অংশ সাবান ও হালকা গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
কোরবানির পশু, চামড়া ও খোলা মাংসের আশপাশে কোনো অবস্থাতেই হাঁচি-কাশি দেয়া যাবে না। কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটাকাটির জায়গায় ভিড় করা উচিত হবে না। যারা এ কাজগুলো করবেন তাদের অবশ্যই অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
মাংস বিলি করার জন্য ছোট ছোট পলিথিনে ভরে পলিথিনের মুখ সুতলি দিয়ে বেঁধে বিলি করা যেতে পারে।
রান্নার সময় কাঁচা মাংস নাড়াচাড়ার আগে ও পরে হাত ভালো করে সাবান ও হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
মাংস রাখার পাত্র ব্যবহারের আগে ও পরে অবশ্যই সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
কাঁচা মাংসের পাত্র, কাটিং বোর্ড, ছুরি ও বঁটি প্রভৃতি হালকা গরম পানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ছোট প্যাকেটে মুখ বন্ধ করে মাংস রাখুন।
কাজ শেষে যাবতীয় বর্জ্য মুখ বন্ধ করা ব্যাগে ভরে স্থানীয় প্রশাসন বা সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় রাখতে হবে। নতুবা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
শুধু মাংস বিলি-বণ্টন নয়- করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পশু কোরবানির আগ থেকে রান্না পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।