২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৯:৫২
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৯:৫২

মাছ-ডিম-সবজির দাম চড়া

প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছেই। হাজার টাকা নিচে বাজারের কথা ভাবাই যায় না। গত দুই দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০ টাকায়। নিন্ম আয়ের মানুষের ভরসা ডিম, পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছের। বাজারে এ দুটি মাছের কেজি এখন ২০০ টাকা। অন্যদিকে শীতের শুরু থেকেই এ বছর তুলনামূলকভাবে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সব রকম সবজি। এখন মৌসুম শেষ দিকে বাজারের সবজির জোগানও কমতে শুরু করেছে। ফলে সবজির দামও বাড়ছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানী মিরপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের মৌসুমেও যেকোনো এক সবজি কিনতেই ৫০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে একজন ক্রেতাকে। মাছ কিনতেও কমপক্ষে ৩০০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

গত মাসের বাজার দরের পরিসংখ্যান দেখলে ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধি নিয়ে আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। বাজারদর অনুযায়ী, গত মাসে ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকায় কেজিপ্রতি বিক্রি হতো। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এই দাম এখন ২২০ টাকা।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ী ও ফার্মের মালিকরা খাবারের দাম ও সরবরাহের খরচ বৃদ্ধির কথা বলে মুরগির দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে বেশি দামে কিনে খুচরা বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

দাম বৃদ্ধি নিয়ে পশ্চিম রাজাবাজারের ব্যবসায়ী মো. জোবায়ের বলেন, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ১৯০-২০০ টাকা কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছি। কিন্তু গতকাল রাতে যেসব মুরগি পাইকারি বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসেছি, তা আজ সকালে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ার ফলে মুরগির বিক্রি অনেক কমে গেছে। এতে আমাদের লোকসানই হচ্ছে।

এ বিষয়ে মগবাজার কাঁচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা লাল মিয়া বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ৫-১০ টাকা করে মুরগির দাম বেড়ে যাচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাবারের দাম বাড়ার কারণে নাকি ফার্মের মালিকরা দাম বাড়িয়েছে। অন্যদিকে সরবরাহের খরচও নাকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে এই দাম বৃদ্ধি।

নতুন করে ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধি নিয়ে অনেকটা ক্ষুব্ধ ও হতাশ নি¤œ আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তরা। তারা বলছেন, দামের কারণে গরু

কিংবা খাসির মাংস অনেক আগে থেকেই নাগালের বাইরে ছিল। এখন ব্রয়লার মুরগির দামও নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় সপ্তাহে অন্তত এক দিনও মাংস খাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছুটির দিনে বাজার করতে আসা গার্মেন্ট কর্মী সাবিয়া খাতুন বলেন, দামের কারণে গরু ও খাসির মাংস তো দুই মাসে একবারও খাওয়া সম্ভব হয় না। একমাত্র ভরসা ছিল ব্রয়লার মুরগিটা। কিন্তু তার দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে ছেলেমেয়েদের আর মাংসও খাওয়াতে পারব না।

এদিকে ডিম ও মুরগির দাম বাড়ায় মাছের ওপর চাপ পড়েছে বলে মনে করছেন কিছু ব্যবসায়ী। কারওয়ান বাজারের একটি মাছের দোকানের বিক্রেতা জালাল মিয়া বলেন, মাংস ও মুরগির দাম বাড়ার প্রভাব মাছের বাজারেও পড়েছে। সে কারণে আড়তে দাম বেড়েছে।

রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা সুরুজ মিয়া বলেন, সবকিছুর দাম বাড়তি, মাছের দামও বাড়ছে। মাছের ফিডের (খাবার) এখন খুব চড়া দাম। খামারিরা এজন্য দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পাইকারি বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। এমনকি সরবরাহ ভালো থাকলেও ইলিশের দাম চড়া। সামুদ্রিক চিংড়ি ও রূপচাঁদা মাছেরও দাম বেশি।

এ বিক্রেতা জানান, তার দোকানে প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকায়, যা আগে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো। এছাড়া প্রতি কেজি ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি। এক কেজির বেশি ওজনের কয়েকটি তাজা ইলিশ, যা দেড় হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ওই ধরনের মাছ সপ্তাহখানেক আগেও এক হাজার ২০০ টাকার কাছাকাছি ছিল।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙাশ ও তেলাপিয়া ছাড়াও অন্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাজা রুই, কাতলা ও মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।

অন্যদিকে বাজারে দেশি প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি ও বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০০-৬৫০ টাকার মধ্যে। তবে এসব প্রজাতির চাষের মাছের দাম তুলনামূলক কিছুটা কম।

অন্যদিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৩৫-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোয় বিক্রি হচ্ছে আরও ৫-১০ টাকা বেশি দামে। প্রতি হালি ডিম কোথাও কোথাও ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতেও দেখা গেছে। তবে ফার্মের সাদা ডিমের দাম কিছুটা কম। অন্যদিকে হাঁসের ডিমের ডজন এখনও ২১০-২২০ টাকা।

Facebook
Twitter
LinkedIn