২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১:৪১
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১:৪১

মাদারটেক এলাকায় পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিড়ম্বনা, স্থানীয় কাউন্সিলর মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন’র পানে তাকিয়ে এলাকাবাসী…

পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু জীবন বাঁচাতে পানির জন্য হাহাকারে, মাদারটেকের বেশিরভাগ এলাকার বাড়িঘরের মানুষ আজ চরম বিপদের মধে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে বাথরুম কিংবা দাঁতমুখ ধোয়া থেকে গৃহিণীদের রান্না, পুরুষের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে গোসল করার ইচ্ছে, সবই বলতে গেলে থমকে আছে! বাড়িওয়ালারা লাইনে পানি পায় না। ভাড়াটিয়াদের সারাদিনে ১ বার অথবা কোনো বাসায় এক ফোটা পানিও দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। বাড়িওয়ালারা দেখায় আশে পাশের পানির পাম্পগুলো থেকে সাপ্লাই দিতে পারছে না। সিংগাপুর রোডের পাম্পে বিষয়টা দেখতে যাওয়া। সেখানে মানুষকে পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অপারেটরকে পাওয়া যায়নি। গেইট লক!  পাম্পের ভিতরে তালা এঁটে নিরুদ্দেশ তিনি! জনৈক তরুনি জানালেন, উনি ৫ লিটার পানি অন্য এলাকা থেকে বড় বোনের রান্নার জন্য বয়ে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এলাকার কমিশনার বলেন, গনমান্য লোক বলেন, একটা মানুষও আমাদের এই দুর্গতি চোখে দেখছে না?
চৌরাস্তা নিবাসী সাজুর আম্মা জানালেন, উনার ৩ বাসার মানুষ আজ কয়টা দিন ধরে ঠিকমত পানি পায় না। রাতে ছেলে অঘুমো করে লাইনে যেটুকু পানি পায় সেই পানিতে কোনমতে জীবন বাঁচানো! উনার বাড়ির বউমার বয়ান: আরেক এলাকায় মামার বাসায় গিয়ে কয়টা দিন ধরে পুরো পরিবার নিয়ে গোসল ও কাপড় ধুয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। মাদারটেক বাজারের পাম্পটি পড়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায় মৃত দানবের বেশে! বাজার এলাকার আফসার উদ্দিনেরও একই অভিমত; ‘এই পুরাতন পাম্পটিকে নতুন করে সংস্কার করা প্রয়োজন।’ আর মধ্যমাদারটেক নিবাসী শামসুদ্দিন ও ইমরান চৌধুরি জানালেন; ‘এলাকার ওয়াসার লাইনটি ৩ ফিটের বদৌলে আরও মোটা লাইনের সংযোগ দিতে পারলে, মাদারটেক মাঠ মসজিদের আশে পাশের বাড়ির পানির সংকট কমার সম্ভাবনা আছে।’ আদর্শপাড়া নিবাসী সেলিম সাহেব বললেন, ‘প্রায় বাড়ির মালিককেই পানির হাহাকারে মিস্ত্রীর পেছনে  প্রতিবছর হাজার হাজার টাকা ঢালতে হয়, নতুন মটর কিনতে হয়, তারপরও লাইনে পানি না আশার যন্ত্রণার শেষ নাই। ‘ এলাকায় সিগাপুর রোডের মেনরোডে, চৌরাস্তা বাজারে, ছাপরামসজিদ,  বাগানবাড়ি, পাশের ওয়ার্ড বনশ্রী, নন্দীপাড়ায়ও কয়েকটা পাম্প সচল আছে। প্রতিবেদন করতে আসা- টেলিভিশন মিডিয়ার জনৈক সাংবাদিক জানালেন, যেই হারে ডিস্ট্রিল ওয়াটার ব্যবসা বেড়েছে পাম্পগুলো থেকে এরা পানি নিয়ে ব্যবসা করছে কিনা, এটা খতিয়ে দেখা দরকার।  এবং এসব পাম্প গুলোতে সময়মত পানি সরবরাহেও প্রয়োজন সঠিক তদারকি। লোডশেডিংকেও এই পানির সমস্যার একটা ভয়াবহ ‘সমস্যার জনক’ বলা যায়! ১ ঘন্টাও পেরোয় না, বিদ্যুৎ চলে যায়? এভাবে সারাদিনে কয়বার যায় আর আসে এর হিসেব করতে করতে এলাকাবাসী ক্লান্ত। এই লোডশেডিং  মানুষকে শুধু চরম গরমেই ফেলছে না, পানির মটর স্টার্ট দিতে পারছে না মানুষ। লাইনের পানি টানছে কিন্তু উপরের ট্যাংকিতে পানি তুলতে পারছে কই?  তার আগেই চলে যায় বিদ্যুৎ ! কিন্তু এত লোডশেডিং? এর কোন সদুত্তর আসে না কর্তৃপক্ষের?

এলাকায় যারাই লোডশেডিং নিয়ে নাকাল, কেঁদে কেটে কুল পায় না। প্রায় সবাই আবার গ্যাস সংকটে এখন রীতিমত, মাটির চুলোয় রান্নাটাও যেন শিখে নিচ্ছে এই ‘আপদকালীন’ সময়ে! প্রায় ৩ মাস ধরে সকাল থেকে গ্যাস চলে যায়! এ যেন এক হঠাৎ উধাও খেলা শুরু হয়েছে? যেমন যায় বিদ্যুৎ ও পানি! গ্যাসের চুলায়ও অনেককে কাঠ লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে গ্রাম থেকে মাটির চুলো সংগ্রহ করেছেন। কেউ সিলিন্ডার কিনছেন। তবে, ৫ তলা ৬ তলার ছাদে মাটির চুলোয় রান্নার  দৃশ্যটা অন্যরকম। না দেখলে বুঝবে না কেউ, পরিবারের আহারের আয়োজনে, শহরে বাস করেও, মানুষের কত কষ্ট করতে হচ্ছে?  অথচ সদ্য গ্যাসের বাড়তি বিলসহ, বিদ্যুৎ-পানির বিল ভাড়াটিয়া, বাড়িওলা উভয়ই বিনা বকেয়ায় পরিশোধ করে যাচ্ছে মাসের পর মাস। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায়- একসাথে ৩ সমস্যার আবর্তে অতিষ্ট নাগরিক জীবনের কোন সুরাহা করছে না সরকারি মহল।

এই বিষয়টা নিয়েই মুখোমুখি হওয়া; অত্র  ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনাব জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে – “এলাকার মানুষের এত ভোগান্তি হচ্ছে, আপনি কতটা অবগত?”

তিনি আন্তরিকতার সাথে জানালেনঃ

” আমি ইতিমধ্যেই মাদারটেক বাজারের পানির পাম্পটি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এটা নবরূপে ঢেলে সাজাতে যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা করব। সরকারি জায়গা পেলে অদ্য এলাকায় যেখানে পানির সংকট সবচেয়ে প্রবল, সেখানে আরও নতুন পাম্প বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করব। এলাকার বিদ্যুৎ সমস্যা লোডশেডিং। কমবেশি সবাই আমরা এই যন্ত্রণা ভোগ করছি। তবে আশাকরি, অচিরেই এই সংকট কেটে যাবে। আর এলাকায় গ্যাসের যে সমস্যা , এটা নিয়েও ভাবছি। এটা আসলে জাতীয় সমস্যা। এলাকার প্রধান সড়কটি বড় করে যানজট নিরসনেও আমাকে কাজ করতে হবে। আমার এলাকাবাসীর সব সমস্যা সমাধানে ইনশাআল্লাহ সবসময় আমি সবার পাশে থাকব। “

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

Facebook
Twitter
LinkedIn