মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার অধীনে সাব রেজিস্টার অফিসের নামে একের পর এক অভিযোগ আসছে। এর বেশিরভাগ অভিযোগ- কুলাউড়া থানার পৃথিমপাশা মৌজার জমি সংক্রান্ত বিষয়ে।
পৃথিমপাশা মৌজার ভূমি অফিসে জমি রেজিঃ নিয়ে কাজের জটিলতায় ভুগছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। সরষের থলিতে ভূত পুষে ভূত তাড়াতে ওঁঝা ডেকেও এখন কোন কাজ হচ্ছে না। এসিল্যান্ড অফিসে পৃথিমপাশা মৌজার “ভলিয়ম আর এস” নিয়ে চলছে টালবাহানা। প্রায় দুই বছর ধরে এসিল্যান্ড অফিসে পৃথিমপাশার গ্রামবাসীরা যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে, পৈতৃক জমি বিক্রি করেছেন, কেউ কেউ ক্রেতা থেকে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে জমির পুরো টাকা অথবা আংশিক টাকা বায়নামা বাবদ গ্রহণ করলেও ক্রেতাকে প্রায় দুটি বছর ধরে জমি বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। এদিকে অনেকের বায়নার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। বিক্রেতার দায়বদ্ধতা ক্রেতাকে জমি রেজিঃ দিয়ে বুঝিয়ে দিবেন কিন্তু জমির খারিজ নাম্বার না পাওয়ায়, জমি রেজিঃ দিতে পারছেন না। ক্রেতা উনার সারাজীবনের কষ্টের সঞ্চয় জমি কেনার জন্য বিক্রেতাকে প্রদান করলেও, নিজের জমি বুঝে নিতে পারছেন না। এমনও দেখা গেছে; পৃথিমপাশা মৌজার অনেক বিক্রেতার পৈতৃকসূত্রে পাওয়া জমি, নিজের নামে নামজারী খারিজ করতে সূদুর বিদেশ থেকেও এসেছেন। প্রবাস জীবনের জটিলতার চেয়ে জমি জমার কাগজ ঠিক ঠাক করার জটিলতা যে আরও কঠিন, সেটা এসিল্যন্ড অফিসে ছুটে গিয়েই বুঝতে পেরেছেন পৃথিমপাশা মৌজার রেমিটেন্স যোদ্ধারা! ভূমি-এসিল্যান্ড অফিসের কর্মচারীদের মুখে আজ কে না কাল, এই কাগজ সেই কাগজ, ভলিয়ম আসে নাই, খারিজ নাম্বার আসবে ইত্যাদি শুনতে শুনতেই অনেকের বিদেশে যাওয়ার ছুটিই শেষ হয়ে যায়! হয় না আর নিজের নামে জমি বুঝে নেয়া। অনেক নতুন বিদেশে যাওয়া যুবকও এই নামজারী জটিলতায় জমি বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে বিদেশে যেতে পারছে না! রেমিটেন্স যোদ্ধা হয়েও এই পৃথিমপাশা মৌজার কিছু মানুষ আছেন বিপদে। আবার নতুন রেমিটেন্স যোদ্ধা হতে গিয়েও ভুগতে হচ্ছে অনেক যুবককে আর্থিক সমস্যায়। আর স্থানীয় যারা দেশে আছেন। ব্যবসার প্রয়োজনে কিংবা চিকিৎসার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- জমি বিক্রি করবেন, এমন বিক্রেতারা পড়েছেন- ‘গ্যাড়াকলে’। অনেকে পৈতৃক জমি জমা বিক্রির নামে ক্রেতার কাছ থেকে বায়নার অর্থ নিয়ে, খরচ করেও পড়েছেন আরও কঠিন বিপদে! এসব ক্রেতারা একবার মৌলভীবাজার ভূমি অফিসে যান। আবার যান কুলাউড়া এসিল্যান্ডের কাছে। এতদিন কুলাউড়া অফিস শুধু বলেছে- মৌলভীবাজার থেকে ভলিয়ম আসে নাই। যদি না এসে থাকে-এটাই তো প্রশ্ন? মৌলভীবাজার কর্তৃপক্ষ “ভলিয়ম আর এস” কুলাউড়া এসিল্যান্ডে পাঠাতে কেন গাফিলতি করছে। আর কুলাউড়ার ভূমি রেজিঃ অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ পৃথিমপাশা মৌজার “ভলিয়ম আর এস” মৌলভীবাজার থেকে আনতে কেন টালবাহানা করছে? পৃথিমপাশা মৌজার গ্রামবাসীকে মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া এসিল্যান্ড অফিস কেউ কোন সঠিক তথ্য দিতে পারছে না। যার ফলে- পৃথিমপাশা গ্রামবাসীরা অনেকেই বায়নার টাকা খরচ করে আছেন বিপাকে। ক্রেতার দৈনিক চাপে কুলাউড়া অফিসে যোগাযোগ করলেও, এই অফিস থেকে বলা হচ্ছে- আগামী মাসে সবাইকে রেজিঃ দিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু নাম- প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জমির মালিক জানালেন; সিলেট থেকে তিনি কুলাউড়া অফিসে আসেন সপ্তাহে ২-৩ বার! পৃথিমপাশা মৌজার উনার জমির রেজিঃ বিষয়ে বিগত মে মাস থেকে মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া সাব রেজিঃ অফিসে শুধু ছুটোছুটিই করছেন। তবু কোন কুল কিনারা হচ্ছে না। প্রতিদিন ৪ জন ক্রেতাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে দিয়ে এভাবে বায়নার দিন তারিখও উনার শেষ হয়ে গেছে? কোন উপায় না পেয়ে, বিক্রেতাদের কোন সঠিক রেজিঃ তারিখও বলতে পারছেন না। কুলাউড়া এসিল্যান্ড অফিস থেকে নভেম্বর মাসের আশা দিলেও,আদৌ নভেম্বর মাসে জমি রেজিঃ হবে কিনা-এখনও এই মৌজার জমির মালিকগণ সন্দিহান আছেন। কুলাউড়া অফিসের গাফিলতির ফলে ক্রেতার কাছে রোজই স্থানীয় জমির মালিকদের এভাবে অপমান ও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। ক্রেতারাই বা আর কত ধৈর্য্য ধারণ করবে? জমির পেছনে ক্রেতাদের অর্থ ব্যয় হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। সবচেয়ে বড় বিরক্তকর বিষয় হচ্ছে; জমি রেজিস্ট্রির অপেক্ষায় সবার মূল্যবান সময় চলে যাচ্ছে। পৃথিমপাশা মৌজার জনৈক ক্রেতা জানান: জমি রেজিস্ট্রি বুঝে নিয়ে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজে যোগ দেবার কথা। কিন্তু এই এক বাড়তি দুশ্চিন্তায় কোন কাজই মন বসছে না। অনেকগুলো টাকা জমির মালিকের পকেটে রেখে কি করে কাজে মন বসবে মানুষের? বায়না করা এই বিপদগ্রস্ত মানুষগুলো’র তবু বহু প্রতিক্ষীত আকাঙ্খা- জমি রেজিঃ করে একখণ্ড জমির মালিক হবেন। কবে ঘটবে মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ স্বপ্নের এই কাঙ্খিত প্রতিফলন? কুলাউড়া এসিল্যান্ড অফিসের দায়িত্বরত কর্তকর্তাদের হাতে অহেতুক জিম্মি হয়ে আছে পৃথিমপাশা মৌজার সাধারণ মানুষগুলো। ক্রেতা ও বিক্রেতার রোজকার কঠিন তর্ক বিতর্ক এসিল্যান্ড অফিসের কর্তাব্যক্তিরা উপলব্ধি করতে পারছেন কই?
ভূমি সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর পোস্ট মর্টেম করতে গেলে, চলে আসবে উক্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক রাঘব বোয়ালদের কথা! পলায়নকারী ও ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাভেদ) এর মতো লুটেরাদের কথা কে না জানে? শুধু যুক্তরাজ্যেই যে কিনা বাড়ি করেছে ৩৬০ টি। আর আরব আমিরাতে করেছে ৩০০ টি বাড়ি। এদের মতো লোক যখন ছিল এ দেশের ভূমি মন্ত্রী? তখন ভূমি অফিসের বাদবাকি ‘ফুল-ফল-কান্ড’ আর কতটা সরলরেখায় পথ অতিক্রম করবে? মৌলভীবাজার আর কুলাউড়ার ভূমি অফিসের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে না পারলে এসিল্যান্ড অফিসের জনসেবা অসম্ভব। এদের আচরণেই বোঝা যাচ্ছে। এখনও অনেকে এই অন্তবর্তী সরকারের সেনাবাহিনীর মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতাকেও উপেক্ষা করছেন। পৃথিমপাশা মৌজার এই প্রতিবেদনটিই একটি উপযুক্ত প্রমাণ। জুলাই আন্দোলেন ঠিক মাঝ পথে কুলাউড়া ভূমি অফিসে নিযোগ দেয়া হয়েছে- শাহ জহরুল হোসেনকে। গত ৯ জুলাই মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে তিনি কাজে যোগদান করেন। পূর্বের সরকারের নিয়োগে জমি সংক্রান্ত ভেজাল সৃষ্টিতে অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উসকে দেয়ার কোন কারণ আছে কিনা, এটাও এখন খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।
কুলাউড়া থানার অধীনে-পৃথিমপাশা মৌজার ভূমি সংক্রান্ত এই জটিলতা নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা থেকে শুধু মুখে মুখেই বলা হচ্ছে- কুলাউড়াি এসিল্যান্ডে ভলিয়ম দিয়েছে। কিন্তু ই-সেন্টার থেকে এখনও অনলাইন চালু করা হয়নি! কেনইবা অনলাইনে চালু করা হচ্ছে না। বিষয়টা মৌলভীবাজার এবং কুলাউড়ার এসিল্যান্ড অফিস উভয়ই নিশ্চুপ! অথচ বিষয়টা কুলাউড়ার পৃথিমপাশা মৌজার ভূমি বিভাগের জন্য কত বড় এক সমস্যা সৃষ্টি করে বসে আছে।
জমির হালনাগাদ তথ্যাদি অলনাইন চালু না করার কারণে নামজারী খারিজ করতে পারছেন না। পারছেন নতুন কোন পৈতৃক জমি নিজের নামে খারিজসহ ক্রেতাকে রেজিঃ করে দিতে। মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়- কুলাউড়া পৃথিমপাশা মৌজার ভলিয়ম ই-সেন্টার থেকে অনলাইনে চালু করার বিষয়টি সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসকের হাতে ন্যস্ত। জেলা প্রশাসক স্বয়ং (ভূমি) বিভাগকে দায়িত্ব দেয়। যা সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসকের অধীন। কিন্তু জেলা প্রশাসক-ই বা কেন এত জটিল একটা সমস্যার আশু কোন সমাধান দিচ্ছেন না? এটা নিয়ে পৃথিমপাশা, কুলাউড়াবাসী পুরোই হতাশ! অভিযোগ নিউজ ২৪ বিডি-এর স্থানীয় প্রতিবেদককে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ইতিমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ই-সেন্টার থেকে অনলাইনে চালু না করার ফলে কুলাউড়া অফিস পিটিশন নিচ্ছে কিন্তু অনলাইনে কোন কাজ করতে পারছে না। জেলা প্রশাসক উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলেই এই কঠিন সমস্যার আশু সমাধান হবে। তবে, মাননীয় জেলা প্রশাসকের বিষয়টি বিভাগীয় তদন্ত করা উচিত। মৌলভাবাজার জেলা এসিল্যান্ড নাকি কুলাউড়া এসি ল্যান্ডকে ২ বছর আগে আর এস গেজেট দিয়েছে। তাহলে কুলাউড়ার পৃথিমপাশা মৌজার ভলিয়ম এতদিন কেন আসল না? ভলিয়ম না পাওয়ার এই নাটকীয় কারণটা কী? কেন স্থানীয় লোকজন প্রায় ২ বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছে? ইউএনও, এসিল্যান্ড কেন এত জটিল একটা সমস্যাকে এতদিন ধরে পাশ কাটিয়ে গেলেন? এটাও উনাকে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করছেন স্থানীয়রা। ভলিয়ম হোক কি অনলাইন হোক-এসিল্যান্ডকে জেলা প্রশাসক বিষয়টি সুরাহা করতে আদেশ করার ক্ষমতা রাখেন। আমরা জানি-ভূমি অফিসের নিজস্ব আইডি আছে। তারপরও মানুষজন পৈতৃক প্রাপ্ত জমি এতটা বছর ধরে খারিজ করতে পারছে না। অদ্ভতুড়ে কান্ডই ঘটে চলেছে কুলাউড়া ভূমি অফিসে! স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে ভূমির অধীনে যারাই কাজ করছেন প্রায় লোকই যেন স্বেরাচারী ভাব ধারণ করে চলেছে। এবং এখনও? যা সত্যি রহস্যজনক! বিগত সরকারের আমলে ভূমির কাজ হাতে কলমেও হয়েছে। খারিজ হয়েছে। সোজা কথায় পয়সার বিনিময়ে অতি জরুরি রেজিঃ হয়েছে। এখন অনলাইন হওয়ায় হাতে কলমে যা খুশী করে টাকা আয়ের রাস্তা বন্ধ। কুলাউড়া ভূমি অফিসের অধীনের অন্যান্য ইউনিয়নের ভলিয়ম ও অনলাইন চালু হয়েছে। পৃথিমপাশার পাশে ১৩ নম্বর কর্মদা মৌজার ভলিয়ম অনলাইন চালু হলেও পাশের ইউনিয়ন পৃথিমপাশা মৌজার ভলিয়ম এখনও ই-সেন্টার অনলাইন চালু করছে না। যা সত্যি হতাশাজনক!
পৃথিমপাশা মৌজার গ্রামবাসীরা এক কঠিন বিপদে পড়েই জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ ২৪ বিডি’র মাধ্যমে আকূল আবেদন জানাচ্ছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয় অচিরেই-পৃথিমপাশা মৌজার ভলিয়ম ও ই-সেন্টার অনলাইন চালুর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এটাই উক্ত মৌজার গ্রামবাসীদের প্রত্যাশা। বিগত সরকারের জঞ্জাল ধুয়ে মুছে যাবে। নতুন উদ্যোমে নতুন সেবায় সরকারের ভূমি অফিস নাগরিকের যথাযথ সেবা প্রদান করবেন। দেশের ভূমিসেবার মানোন্নয়নে নাগরিকের অধিকার রক্ষার কোন বিকল্প নেই।
লেখা ও ছবি :
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি