১৯৯৪ সালের ৩০ জুন আমেরিকায় বিশ্বকাপের আসর বসেছিল।
দুটি আকর্ষণ নিয়ে এ বিশ্বকাপ সবার নজর কেড়েছিল। একটি ছিল পশ্চিম জার্মানি তাদের শিরোপা নিজের ঘরেই রেখে দিতে পারে কিনা। অন্যটি ছিল, ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের মহানায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনার আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরা।
ব্রাজিল, জার্মানিদের পরাভূত করে ম্যারাডোনা ফের আর্জেন্টিনাকে কাপ এনে দিতে পারবেন কিনা সেই স্বপ্নে বিভোর ছিল ফুটবলবিশ্ব।
আর এক কুঠারাঘাতে সে স্বপ্ন ভেঙে চূড়মার হয়ে যায়।
ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা এক চরম নাটকীয় ঘোষণায় জানায়, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের খেলোয়াড় দিয়েগো ম্যারাডোনার মূত্রের নমুনা পরীক্ষায় বলবর্ধকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
আর্জেন্টিনা- নাইজেরিয়া ম্যাচে নিষিদ্ধ বলবর্ধক ব্যবহারের নিয়মবিধি লংঘন করায় তাকে খেলা থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ওই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের মেডিকেল টিমের সদস্য ছিলেন রবের্তো পেইদ্রো একজন নামকরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে রবের্তো বিবিসিকে জানান, ফিফার এই ঘোষণায় অই সময় আর্জেন্টিনা দলে এমন শোক বয়ে যায়, যেন কেউ মারা গেছেন।
রবের্তো পেইদ্রো বলেন, আমি গিয়ে ম্যানেজার ব্যাসিলেকে বললাম ম্যারাডোনা খেলতে পারবেন না। তার শরীরে নিষিদ্ধ বলবর্ধক এফেড্রিন পাওয়া গেছে। তিনি টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। এটা শোনার পর পর তাৎক্ষণিক সব খেলোয়াড়দের একসঙ্গে হতে বললেন, সবাইকে দুঃসংবাদটা দিলেন ব্যাসিল। হঠাৎ চারিদিক স্তব্ধ হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল কেউ মারা গেছে- কারও অন্তেষ্ট্যি হচ্ছে। সবাই চুপ, কেউ হাসিঠাট্টা করছে না, কথা বলছে না, অনেকে খাচ্ছেও না।
এ খবরে ম্যারাডোনাও ভেঙে পড়েন একেবারে। কারণ তিনি জানতেন, এমন কোনো মাদক বা নিষিদ্ধ কিছু গ্রহণ করেননি।
কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই জানা গেল দিয়েগো ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক তাকে ওজন কমানোর জন্য একটি ওষুধ দিয়েছিলেন যার একটা উপাদান ছিল নিষিদ্ধ এফিড্রিন।
এই এফিড্রিন সাধারণ জ্বর, ব্যাথা উপশমে ব্যবহৃত হয়।
ওই ওষুধে নিষিদ্ধ পদার্থ রয়েছে তা ম্যারাডোনা নিজেও জানতেন না। তিনি জানতেন, ভিটামিন নিয়েছিলেন কিছু।
যে কারণে ৯৪ এর বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে একেবারেই মুষড়ে পড়েন ম্যারাডোনা।
সে দুঃসহ স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে ড. রবের্তো পেইদ্রো বলেন, দ্বিতীয়বার পরীক্ষার ফলও পজিটিভ হওয়ায় ম্যারাডোনাকে টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কার করা হয়। দিয়েগো সে সময় মরিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। কারও সঙ্গে কথা না বলে একটা ঘরে ঢুকে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন।
ড. পেইদ্রো বলেন, মূলত ওই ঘটনার মধ্যে দিয়ে
ম্যারাডোনার ১৭ বছরের উজ্জ্বল আন্তর্জাতিক ফুটবল কেরিয়ারের ইতি ঘটে । আর এর সঙ্গে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে জেতার স্বপ্ন ভেঙে চূরমার হয়ে যায়। কারণ ম্যারাডোনা ছিলেন দলের প্রাণ-ভোমরা, নিউক্লিয়াস। তাকে ছাড়া দল ওই অবস্থায় বুলগেরিয়ার সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল। বুলগেরিয়ার কাছে হারে ২-০ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। এরপরের ম্যাচটিও হারে তারা।