মারুফ আহমেদ
ইসরায়েল-হামাস গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এটা আজ প্রধান শিরোনাম। এই চুক্তি গাজায় যুদ্ধ থামিয়ে দেবে। জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিকে পর্যায়ক্রমে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। সূত্র আরও জানিয়েছে-রবিবার থেকে এর সুফল শুরু হবে। এই চুক্তির ফলে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দিবে বলে আশা করা যায়। একই সাথে ইসরায়েলি কারাগার থেকে কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দেওয়া হবে। বছরের প্রথম ঘটে যাওয়া এই আলোড়নের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে-উভয়ের গুলিবর্ষণ বন্ধ হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিক্নেন এই সিদ্ধান্ত একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন। সিএনএন কে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন-যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি চুক্তির পর এই প্রথম কোন শুভবুদ্ধির উদয় হচ্ছে। এতে হামাস-ইসরাইল গুলি বন্ধ করবে। ইসরাইল তার বাহিনী প্রত্যাহার করে জিন্মিদের মুক্তি দিবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ব্লিক্নেন আগেই বলেছিলেন-“ আমাদের একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার জন্য বোঝাপড়া করতে হবে। আলোচনায় বসতে হবে। যেন ইসরায়েল তার সমস্ত বাহিনী নিয়ে হাজা থেকে সরে যাবে। হামাসও থেমে যাবে।” কথার সাথে মিলে গেলেও ঘটনা যে আচানক হয়েছে বলা যাবে না। কেননা-গত ছয়-সাত মাস ধরে যুদ্ধবিরতির স্থায়ী সমাধান নিয়ে আরব নেতারা কাজ করছিলেন। বিশেষ করে মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতার কথা অস্বীকার করা যাবে না। এই শুভক্ষণটি সবার মনকেই উদ্বেলিত করবে। কেননা এই যুদ্ধ কত না প্রিয় মানুষ চলে গেছে উভয়ের বর্বরোচিত হামলায়! আমেরিকা ইসরায়েলের কাছে এই নিষ্ঠরতা স্পর্শ না করলেও পুরো বিশ্ব বিবেককেই কাঁদিয়েছে এতোদিন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল- হামাসের যুদ্ধে মারা যায় ২০০ মানুষ। জিম্মি হন ২৫০ অধিক। গত ১৫ মাস ধরে ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজায় এই পর্যন্ত ৪৬ হাজার ১২০ ফিলিস্তিনি মানুষ নিহত হন। যাদের অধিকাংশই শিশু ও নারী। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে-অচিরেই সব নিস্পত্তি হবে। ফিলিস্তিনি বন্দিরা মুক্তি পাবে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী প্রথম পর্যায়ে জনসংখ্যা কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করবে কিন্তু ফিলাডেলফি করিডোর নামে পরিচিত গাজা-মিশর সীমান্ত বরাবর গাজার অভ্যন্তরে একটি বাফার জোনও বজায় রাখবে, যার আকার এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, জর্ডান, মিশরের কর্মকর্তারা আজ কায়রোতে বিশদ আলোচনায় বসবেন বলেও আশা করা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির প্রতিক্রিয়ায় জানান-‘আমাদের মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মিদের জন্য একটি চুক্তি আছে। এই চুক্তিতেই খুব শীঘ্রই তাদের মুক্তি দেয়া হবে।’
হামাস এই চুক্তিটি অনুমোদন করেছে এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা বাসেম নাইম প্রতিক্রিয়ায় বলেন-‘আন্দোলন সম্পূর্ণ দায়িত্ব এবং ইতিবাচকতার সাথে এই বিষয়টিকে মোকাবেলা করেছে, গাজা উপতক্যায় আমাদের অবিচল ও স্থিতিশীল জনগণের প্রতি তার কর্তব্য থেকে যা উদ্ভব হয়েছে। ইহুদিবাদী আগ্রাসন ঠেকাতে ও ওদের গণহত্যা বন্ধ করতে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি হামাস গ্রহণ করেছে। শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের নিরিহ মানুষের কথা ভেবে। বলা যায়-আসন্ন মাহে রমজান এবার ফিলিস্তিনবাসীর জন্য শান্তিময় হবে।
লেখক: সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা