করোনাভাইরাস শনাক্ত করার লক্ষ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্যকারিতা যাচাই কমিটি।
বুধবার (১৭ জুন) এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে এ নিয়ে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দ্রুত করোনাভাইরাস শনাক্ত করার লক্ষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিট কার্যকর নয়।’
বিএসএমএমইউ কর্তৃক গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল প্রদত্ব GR COVID-19 rapid dot blot immunoassay kit মূল্যায়ন রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ৯০,০০০ এর বেশি। করোনা রোগী শনাক্তকরণে প্রচলিত RT PCR পরীক্ষা এ পর্যন্ত ব্যবহার করে আসলেও অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডিভিত্তিক টেস্টিং একটি সময়ের দাবি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (DGDA) গত ২৯ এপ্রিল বিএসএমএমইউ প্রশাসনকে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের GR COVID-19 rapid dot blot immunoassay কিটের একটি বিজ্ঞানসম্মত মূল্যায়নের অনুরোধ করে এবং বিএসএমএমইউকে Contract Research Organization (CRO) হিসেবে নিয়োগ করে। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ ২ মে ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমের নেতৃত্বে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি গবেষণা দল গঠন করেন।
পরে গবেষণা দল ‘Evaluation of GRCOVID-19 Rapid Antibody Dot Test and GR COVID-19 Rapid Antigen Dot Test for detection of SARS-CoV-2’ শিরোনামে প্রকল্প প্রস্তুাবনা ১৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের Institutional Review Board (IRB) কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন।
মূল্যায়ন রিপোর্টে বলা হয়, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে এক বছর সময় দিলেও বাস্তবতার নিরিখে ও দেশের ক্রান্তিকালকে বিবেচনায় রেখে গবেষণা দল এক মাসের মধ্যে গবেষণা সম্পাদনের লক্ষ্য সামনে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। মোট ৫০৯টি রক্ত স্যাম্পল পরীক্ষার মাধ্যমে এক মাস সময়ের মধ্যেই গবেষণা পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয় এবং পরিসংখ্যান কার্যক্রমের জন্য আরও এক সপ্তাহ ব্যয় হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল ১২ মে প্রথম ২০০ অ্যান্টিবডি পরীক্ষা কিট গবেষণা দলকে দেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষণা করার লক্ষ্য থাকলেও ১৯ মে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল রক্তের পরিবর্তে রোগীর লালা সংগ্রহের অনুরোধ জানান। গবেষণা দল সেই প্রেক্ষিতে গবেষণা প্রস্তাবনা পরিবর্তন করার আবেদন জানান এবং IRB, BSMMU ২৩ মে পরিবর্তিত প্রস্তাবনা অনুমোদন করেন। পরবর্তিতে লালাতে পরীক্ষার ফলাফল আশানুরুপ হয়নি—এই মর্মে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল বিএসএমএমইউ গবেষণা দলকে লালায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত রাখার অনুরোধ করে এবং শুধুমাত্র অ্যান্টিবডি কিটের গবেষণা চালু রাখার অনুরোধ জানায়।
গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল কর্তৃপক্ষের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন বিলম্বিত হয়। কিন্তু গবেষণা টিম অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এক মাসের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করে এবং রিপোর্ট তৈরি করে।
গবেষণা টিম চূড়ান্ত যেসব সুপারিশ করেন-
১। এই কিটটি উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের শনাক্তকরণে কার্যকরি নয়। উপসর্গের প্রথম দুই সপ্তাহে এই কিট ব্যবহার করে শুধুমাত্র ১১-৪০% রোগীর রোগ শনাক্তকরণ সম্ভব। তবে যে সমস্ত স্থানে প্রচলিত RT PCR পদ্ধতি চালু নেই অথবা যাদের কোভিড উপসর্গ থাকা সত্বেও RT PCR নেগেটিভ এসেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই কিট কিছুটা সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
২। এই কিট কোভিড রোগের ব্যাপ্তি বা seroprevalence দেখার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এই কিটের মাধ্যমে ৭০% রোগী যাদের ইতিপূর্বে কোভিড রোগ হয়েছিলো তাদের শনাক্তকরণ সম্ভব।
৩। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল কর্তৃক প্রদত্ত কিট অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে পারলেও IgM (যা ইনফেকশনের শুরুতেই তৈরি হয়) এবং IgG (ইনফেকশনের বিলম্বিত পর্যায়ে তৈরি হয়)তা আলাদাভাবে পার্থক্য করতে পারে না।