ব্রিকসের নতুন সদস্য নেওয়ার বিষয়ে জোটের পাঁচ সদস্যের মধ্যে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বৃহস্পতিবারই (২৪ আগস্ট) এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এই অর্থনৈতিক জোটের সদস্য হতে এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে ৪০টির বেশি দেশ। তার মধ্যে বাংলাদেশসহ অন্তত ২৩টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে।
ব্রিকস জোটে নতুন সদস্য নেওয়ার বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। গত বুধবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে এ বিষয়ে তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কেন ভারত ব্রিকসে নতুন সদস্য নেওয়ার বিষয়ে এত আগ্রহী?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ার এ বিষয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন করেছে। বিভিন্ন দেশকে ব্রিকস সদস্য করার ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেখানে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ভারতের জন্য ঢাকার প্রার্থিতা বাছাই অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বাংলাদেশ ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী। যদিও চীন তাদের জন্য অন্যতম শীর্ষ দাতা এবং বিনিয়োগের উৎস হিসেবে রয়ে গেছে, তবু ঢাকার ওপর নয়াদিল্লির যথেষ্ট আস্থা রয়েছে– অন্তত যতক্ষণ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সম্পর্কটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কৌশলগত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় না। তবে ২০২২ সালে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবস্থা ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও অতিক্রম করে’।
গত ২২ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হয়েছে ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও এতে অংশ নিয়েছেন চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের সরকারপ্রধানরা। জোটের আরেক সদস্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবারের সম্মেলনে সশরীরে যোগ দেননি।
বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সদস্যপদের মানদণ্ড এবং ব্রিকসের নতুন সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত। নয়াদিল্লির কৌশলগত অংশীদারদের ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটি।
শক্তিশালী উদীয়মান বাজার হিসেবে পশ্চিমাদের বিকল্প বিবেচনা করা হয় ব্রিকস জোটকে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের শক্তিশালী হয়ে ওঠা বর্ণনা করতে গিয়ে ২০০১ সালে প্রথম ব্রিক (বিআরআইসি) শব্দটি ব্যবহার করেন গোল্ডম্যান স্যাশের অর্থনীতিবিদ জিম ও’নেইল। ২০০৯ সালে রাশিয়ায় নিজেদের প্রথম সম্মেলন করে দেশগুলো। ২০১০ সালে এতে যোগ দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাও। তখন থেকে এই জোট ব্রিকস (বিআরআইসিএস) নামে পরিচিত হয়।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ ব্রিকস দেশগুলোতে বসবাস করে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ জোটের অবদান প্রায় ২৬ শতাংশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বিশেষ আমন্ত্রণে এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন দিনব্যাপী ব্রিকস সম্মেলন চলবে ২২ থেকে ২৪ আগস্ট। কোভিড-১৯ মহামারির পর এটিই হচ্ছে ব্রিকসের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন।