২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ১২:৩৫
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ১২:৩৫

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য আজ

বিশ্বের ইতিহাসের এক বর্ণময় অধ্যায়ের সমাপ্তি আজ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আসীন ও বিশ্বের প্রবীণতম রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য হবে আজ। ব্রিটেনকে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে শাসন করে আসা এই রানিকে তাই রাজকীয়ভাবেই জানানো হবে বিদায়।

রানির শেষকৃত্যে যোগ দিতে বিশ্বের বহু দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে উপস্থিত হয়েছেন। উপস্থিত হয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন রাজপরিবারের প্রতিনিধিরাও।

রানির শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, ফলে বিশ্বের যেকোনও প্রান্ত থেকে দেখার সুযোগ থাকছে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডে বালমোরাল এস্টেটে ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন রানি এলিজাবেথ। পরে তার মরদেহ আনা হয় লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে হলে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়েছে তার কফিন। গত কয়েকদিন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রানির কফিনের কাছে এসে সম্মান জানাতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। সাবেক তারকা ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম ১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সুযোগ পায় কফিনের সামনে যাওয়ার।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ১১টার দিকে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হবে। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে রানির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনের ওয়েলিংটনে। সেখান থেকে কফিন আনা হবে উইন্ডসোর দুর্গে। পরে সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে আসবে রানির মরদেহ। সেখানে বিশ্বের অনেক দেশের সরকারপ্রধান উপস্থিত থাকবেন। 

রাজা তৃতীয় চার্লস ও রাজপরিবারের সদস্যরা কফিনের সঙ্গে সঙ্গে পায়ে হেঁটে যাবেন। রাজকীয় নৌবাহিনীর ১৪২ জন নাবিক একটি কামানবাহী শকটে করে কফিনটি টেনে নিয়ে যাবেন। তখন সেখানে দুই হাজারেরও বেশি আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন।

সোমবার সকাল ১১টায় শেষকৃত্য শুরু হয়ে দুপুরের ঠিক আগে অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশব্যাপী দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর রানির মরদেহ লন্ডনের পশ্চিমে উইন্ডসর কা‌সলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে উইন্ডসর কাসলের পাশে সেন্ট জর্জ গির্জায় আরেকবার ছোট করে প্রার্থনা করা হবে।

উইন্ডসরের ডিন সেখানে একটি প্রার্থনা পরিচালনা করবেন। প্রায় ৮০০ জন লোক এতে উপস্থিত থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এসব হয়ে যাওয়ার পর সোমবারই রানির পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজনদের জন্য আরেকটি প্রার্থনা সভা হবে। এরপর রানির কফিনটি সেন্ট জর্জ গির্জার রয়্যাল ভল্টে সমাহিত করা হবে। যেখানে রানির স্বামী এডিনবার্গের প্রয়াত ডিউকের মরদেহ সমাধিস্থ করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে ব্রিটেনে ১০ দিনের দীর্ঘ জাতীয় শোক।

রানির জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজা চার্লস তৃতীয় বলেন, তার মায়ের মৃত্যুর পর জনগণের সহানুভূতি প্রকাশের পরিমাপ সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছেন যেসব বিশ্বনেতা

সারা বিশ্বের প্রায় ৫০০ রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিদেশি নেতা আজ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগ দেবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার লন্ডনে পৌঁছেছেন এবং সেখানে তিনি একটি আনুষ্ঠানিক শোক বইতে স্বাক্ষর করেছেন।

এছাড়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ছাড়াও জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার, ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও ম্যাটারেলান্ড এবং আইরিশ তাওইসাচ মাইকেল মার্টিন রানির শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নসহ কমনওয়েলথ দেশগুলোর কিছু নেতা লন্ডনে পৌঁছেছেন আগেই। শেষকৃত্যে প্রত্যাশিত অন্যান্য কমনওয়েলথ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।

ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু। চীন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশানকে রানির শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যে সোমবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শেষকৃত্যে বিশ্ব নেতাদের আগমন ঘিরে স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তার আয়োজন করেছে লন্ডন পুলিশ।

ব্রিটেনের রাজসিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে আসীন থাকা রানি এলিজাবেথ তার নিজ দেশের পাশাপাশি বিশ্ব ইতিহাসেরও একজন সাক্ষী। রানির জীবদ্দশাতেই তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র, টিভি ও ওয়েব সিরিজ।

ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে যতসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই শেষকৃত্য দেখবে তা ১৯৯৭ সালে প্রয়াত রাজবধূ ডায়ানার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ২০১২ সালে লন্ডনের অলিম্পিক এবং রাজপরিবারের সদস্যদের বিয়েসহ সাম্প্রতিক সময়ের সব অনুষ্ঠানকে ছাড়িয়ে যাবে।

রানির শেষকৃত্য এবং বিশ্বনেতাদের আগমনে লন্ডনজুড়ে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn