এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে ৭৫ নং ওয়ার্ড। খিলগাঁও থানার অন্তর্গত। একটি ঢাকার প্রান্ত এলাকা। ভেতরের দিকে পড়েছে। সেই কারণে ঢাকার আধুনিকায়নের প্রারম্ভে, এলাকার ঘনবসতিও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আরও অবাক করার বিষয়; আধুনিক যানবাহনের সুবিধা নিয়ে, মেট্টোরেলের পরিকল্পনাও এগিয়ে চলেছে এই এলাকার আশ পাশকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এমন একটি ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকার বেশ কিছু সড়কের ঠিক মাঝ বরাবর-ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর লিমিটেড (ডিপিডিসি)’র বেদ্যুতিক খুঁটি বা কারেন্টের ভারি পিলার বসানো।
এই ভয়াবহ দৃশ্যপট ঢাকার অভ্যন্তরের ঘটনা। শহর নিয়ে, উন্নয়ন নিয়ে বুলি ফুটিয়ে যারা ফেনা তুলছে, তাদের জন্য অবশ্যই হাস্যকর বিষয়। আর সড়কের মাঝখানে কারেন্টের খুঁটির রিপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যে জাতীয় বেশ কিছু পত্রিকাও প্রতিবেদন পেশ করেছে। অনলাইনেও ভাইরাল হয়েছে। তারপরও কোথাও কোন সুরাহার খবর আমরা পাচ্ছি না। শুধু ডিপিডিসিই না, পল্লী বিদু্ৎ আর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত অনেক পল্লী অঞ্চলেও এই ধরনের ভয়ানক কারেন্টের খুঁটির নজির পাওয়া যাবে খোঁজ করলে। যেগুলো এই সভ্যতার যুগেও বেমানান। এবং দেখবেন কিভাবে বুক ফুলিয়ে রাস্তার মাঝখান দখল করে আছে। অনলাইনেও প্রায় আমরা সড়কের মাঝ বরাবর এমন কারেন্টের খুঁটির চিত্রসহ এলাকার মানুষের ভোগান্তির সংবাদ দেখতে পাই। এসব সূত্র ধরে ঢাকার ভিতরের দিকের একটি এলকায় এলকার মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ নিউজ২৪ এর এই সরজমিন সচিত্র প্রতিবেদন।
৭৫ নং ওয়ার্ডের দাসেরকান্দি টু বাবুর জায়গা হয়ে বালুর পাড় যেতেই এমন অনেক কারেন্টের খুঁটি চোখে পড়বে। সারাবছর ধরেই কারেন্টের এসব খুঁটিতে মানুষের ঘর আলোকিত হয়ে আসছে। কিন্তু দেড় দু’বছর ধরে নতুন সিটির আওতাভুক্ত হয়ে পুরাতন ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত থাকা এসব এলকার উন্নয়ন হয়ে যখনই পাকার সড়ক হয়েছে, তখনই এসব খুঁটি গুলো আসলে রাস্তার উপর চলে এসেছে। আগে যখন মাটির রাস্তা ছিল। এসব খুঁটি বিভিন্ন জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। যখনই এলাকর উন্নয়ন ঘটে, মানুষ দুই দিক থেকে রাস্তার জন্য ৬ ফিট করে জায়গা ছাড়ে এরপরই আসলে পুরাতন এসব কারেন্টের লাইন সড়কে চলে আসে। কিন্তু খুঁটি সড়কের মাঝ থেকে সরানোর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কেন নেয়া হয়নি জানতে চাওয়া হয় এলাকার জনৈক মুরুব্বির কাছে, তিনি জানান, আমরা কয়েকবার বলেছি। কাউন্সিলরও বিষয়টি নিয়ে অবগত। আসলে কি বলব, দেখাই যাচ্ছে এটা কত বড় একটা ভয়ানক সমস্যা। রাস্তার মাঝখানে কারেন্টের খাম্বা ! কিন্তু যখনই আমরা দরখাস্ত জমা দিতে যাই। বিদ্যুৎ অফিস দেখায় ঢাকা সিটি করর্পোরেশনকে। আর যখন ওদের অবগত করতে যাই। তারা বলে এটা ডিপিডিসির কাজ। সেখানে যান ? বর্তমানে শুনেছি এটা আইনি জটিলতার ভেতরেই আছে। এক প্রশাসন আরেক প্রশাসনের কথা বলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। দায়সারা ভাব দেখাচ্ছে। মাঝখানে কঠিন ফেরে আটকে আছি আমরা ভুক্তভোগী এলকাবাসী। তারখাম্বা সম্বলিত সড়কে অটো চালায় মিজু। সে বলল; ‘‘এই রাস্তায় গাড়ি চালানো অনেক ভয়। বিশেষ করে রাতের কথা ভাবুন। দিনেও অনেক দুর্ঘটনার খবর আছে। এক গাড়ি আরেক গাড়িকে সাইড দিতে গেলে মাঝখানের এই খুঁটি জটিল অবস্থার সৃষ্টি করে। যানজট ঘটায়। আর ট্রাক বা বড় গাড়ি এই রাস্তায় ঢুকলে শেষে কোন গাড়িই আর কোনদিকে বের হওয়ার উপায় থাকে না। আমাদের অনেক ড্রাইভার এভাবে খুঁটিতে ধাক্কা খেয়ে, কয়েকবার আহত পর্যন্ত হয়েছে। আসলে মানুষ না মরা পর্যন্ত এই দেশের কারও কোন মাথা ব্যথা হয় না স্যার।’’
ড্রাইভার মিজুর হতাশামাখা সুরের কোন প্রতিউত্তর নাই আমাদেরও। মুখে মুখে ডিজিটাল বাংলাদেশ না বলে উন্নয়নের প্রকৃত কারুকাজে আসলে উচিত সবার কাজ করা। সড়কের মাঝখানে এমন কারেন্টের খুঁটি বিশ্ব সভ্যতার প্রতিযোগিতায় এসে যদি আমরা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নিজেদের দাবী করি। সেটা কতটা প্রাধান্য পাবে? প্রশাসনের ভেবে দেখা দরকার। যেই ভিয়েতনাম উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় আমাদের থেকেও পিছিয়ে ছিল। সেই ভিয়েতনাম আজ, গাড়ি শিল্পে এমন নান্দনিক গাড়ি তৈরি করছে। বিশ্বের প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের সেই উন্নয়নের ধারাকে মেলে ধরছে বুক চেঁতিয়ে। আর আমরা পড়ে আছি এখনও – রাস্তার মাঝখানের তারখাম্বা সরানোর মত অমূলক একটি বিষয় নিয়ে।
কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি না আসা পর্যন্ত বোঝাই যাচ্ছে, দায়সারা ভাবের এই কালচার সোনার বাংলা থেকে কোনদিনও দুর হবে না।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি