২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১০:৩৬
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ১০:৩৬

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার নির্দেশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুলগুলোও যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া দরকার। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, স্কুলগুলোও খুলে দিতে হবে। এটা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাচ্চারা ঘরে থাকতে থাকতে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে তিনি করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং টিকা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেন।

বুধবার পরিকল্পনা বিভাগের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সচিব সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, এত বেতনভাতার পরও দুর্নীত হলে সহ্য করা হবে না। বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

একটি দক্ষ সেবামুখী জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই তার সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিদ্যমান উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে সচিবদের নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ভবিষ্যতে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে এবং সে পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান, সেগুলো মাথায় রেখে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন হতে হবে সুষম উন্নয়ন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ যেন গ্রামেই সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পায়। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি জনতার জন্য এমনভাবে ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কাজে তাদের উৎসাহ বাড়ে। তারা উন্নত জীবন পায়, দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পায়, অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার সুযোগ পায়। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও যেন সেভাবে এগিয়ে যেতে পারে। সেভাবে আমাদের কার্যক্রম চালাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এসবের ভিত্তি তার সরকার কাজের মাধ্যমে তৈরি করেছে। এটা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার সরকার যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব মন্ত্রণালয় এবং সচিবদের ওপর বর্তায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার যার মন্ত্রণালয়ে যে যে প্রকল্প রয়েছে, সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।

এটা করতে পারলেই দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখা সম্ভব। তিনি সচিবদের আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবদের অধীনস্থ দপ্তর বা অধিদপ্তর এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে নিয়মিত বৈঠক করে তাদের সমস্যার খোঁজখবর নেওয়ার আহ্বান জানান। কেননা কোনো কাজে কোথাও যেন স্থবিরতা দেখা দিতে না পারে, বলেন তিনি।

তিনি এ সময় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা বৃদ্ধি, আবাসনের সুযোগ, গাড়ি ক্রয় করা বা গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি সহায়তা দেওয়ার তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, তার নিজেরও একটা চাওয়া আছে আর সেটা হচ্ছে তার সরকারের কাজগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয় এবং মানসম্পন্ন হয়। দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত এগোতে পারবে, ততই এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

একটি দক্ষ জনমুখী জবাবদিহিমূলক সেবাধর্মী প্রশাসন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই একটি দক্ষ সেবামুখী জাবাবদিহিমূলক প্রশাসন, যা দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারবে এবং সেটাই সব থেকে বেশি কার্যকরী হবে। কারণ, বাংলাদেশে আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র পুনরুল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি এবং দেশের উন্নতিও হচ্ছে কাজেই কোনো ধরনের দুর্নীতিকে সহ্য করব না। কারণ, এটা হচ্ছে একটা ব্যাধি।

এই ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি সচিবদেরও এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই দুর্নীতি দেখবেন, সেখানেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, মুজিববর্ষে দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার মাধ্যমে ঠিকানা গড়ে দেওয়া তার সরকারের অঙ্গীকার। এই কর্মসূচি যেন আরেকটু বেগবান হয় এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেদিকে নজর দেওয়ার জন্যও সচিবদের নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছু পরিকল্পনামাফিক করে তার সরকার যদি এগিয়ে যেতে পারে তবেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা সহজ হবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের তো একটাই লক্ষ্য-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশটাকে তিনি উন্নত-সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আমরা সে লক্ষ্য পূরণে কাজ করছি। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার ১০১তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করছি। যে সময়ে এই সভাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কেবল স্বাধীনতাই এনে দেননি, তখন আন্তর্জাতিকভাবে একটি মর্যাদারও সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু দেশের কিছু মানুষের বেইমানির জন্য আমরা সেই অবস্থানটা ধরে রাখতে পারলাম না। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে আরও অনেক আগেই এদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হতে পারত বলেও আক্ষেপ ব্যক্ত করেন তিনি।

শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, ১৫ আগস্টের সব শহিদ, মুক্তিযুদ্ধের শহিদ এবং সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কোনোভাবে ব্যর্থ না হয়। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে উন্নত-সমৃদ্ধিশালী দেশের পথে।

প্রধানমন্ত্রী করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি সবাইকে লক্ষ রাখার আহ্বান জানিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে তার অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে, তারা এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদনের উদ্যোগের উল্লেখ করে বলেন, ইতোমধ্যে দেশে ভ্যাকসিন তৈরি এবং বোতলজাত করার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আর যত ভ্যাকসিন লাগবে, সেটাও আমরা ক্রয় করব এবং সেজন্যও ব্যবস্থা নিয়েছি।

Facebook
Twitter
LinkedIn