তিন তিনটি ফাইনাল। তিনবারই হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ। প্রতিপক্ষের উৎসব হয়েছে তার চোখের সামনে। রানার্স আপ ট্রফি নিয়ে ব্যর্থ মনোরথে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। অথচ বার্সেলোনার হয়ে কত কিছুই না জিতেছেন তিনি। বলা হয়ে থাকে তাকে, ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম মহানায়ক। অথচ তার শোকেসে নেই আর্জেন্টিনার হয়ে একটি ট্রফি। যা লিওনেল মেসিকে ভারাক্রান্ত করে রেখেছিল পুরো ক্যারিয়ারে। শেষ অবধি মেসির সেই দুঃখ ঘুচল কোপা আমেরিকা ফুটবলে। ডি মারিয়ার এক গোলে মেসির হাতে আরাধ্যের ট্রফি। ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপায় বিজয় কেতন আর্জেন্টিনার।
২৮ বছর পর শিরোপা উৎসবে মাতোয়ারা মেসি বিগ্রেড।
২৮ বছর পর প্রথম কোনো বড় টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতল তারা। সবশেষ ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপাই জিতেছিল তারা। এবার জিতে স্পর্শ করল টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১৫ শিরোপা জয়ের রেকর্ডধারী উরুগুয়েকে। প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিততে ব্যর্থ হলো ব্রাজিল; আগের পাঁচ আসরেই শিরোপা জিতেছিল তারা। মহাদেশ সেরা টুর্নামেন্টে দেশের মাটিতে তারা হারল ১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম।
২১ মিনিটে নিজেদের প্রথম ভালো সুযোগেই স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দেয় আর্জেন্টিনা। নিজেদের অর্ধ থেকে রদ্রিগো দে পলের পাস পেয়ে যান ডি মারিয়া। মাঝ পথে বল থামানোর সুযোগ ছিল রেনান লোদির, পারেননি তিনি। পিএসজি মিডফিল্ডার বল রিসিভ করে আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে পাঠান জালে। শেষ পর্যন্ত এই এক গোলেই ঠিক হয় আর্জেন্টিনার শিরোপা ভাগ্য। মেসিদের মুখে ফুটে হাসি।
কোপা আমেরিকায় এই জয়ে, আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়েই যে মেসি বিশ্বজয়ী পেলে, মারাডোনাকে ছাপিয়ে গেছেন এমন নয়। তবে সর্বকালের সেরা আলোচনায় মেসির উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে গেল এবার। ছয় ব্যালন ডি’অর জয়ের রেকর্ড আগে থেকেই মেসির। কোপা আমেরিকার মুকুট মাথায় তোলার পর হয়তো এসে যেতে পারে সপ্তমটিও।
এর আগে তিনটি ফাইনাল খেলেছেন মেসি। হয়টি ট্রফি জেতা। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছিল জার্মানির কাছে শেষ সময়ে গোটশের গোলে। সেটাও হয়েছিল ব্রাজিলে। এরপর টানা দুই বছর কোপার ফাইনালে চিলির কাছে টাইব্রেকারে হার। অভিমানে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায়ই নিয়েছিলেন তিনি। পরে আবার ফিরেছেনও। অন্তত একটি শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে।
২০১৪ সালে জার্মানির বিপক্ষে যে মাঠে হেরেছিলেন বিশ্বকাপের ফাইনালে, যে মাঠে আছে আর্জেন্টিনার অনেক বেদনার কাব্য সেই ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামে জিতলেন দেশের হয়ে প্রথম শিরোপা।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে তো সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বলও জিতেছিলেন মেসি। এবার কোপাতেও তাই। শিরোপার সাথে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। পৃথিবীতে এখন মেসির চেয়ে সুখী মানুষ মনে আর কেউ নেই।
চার গোল করে ছিলেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার পাঁচ অ্যাসিস্ট তো কোপা আমেরিকার ইতিহাসেই রেকর্ড। এত গোল কোনো আসরে ছিল না কারও। এই টুর্নামেন্ট যেন মেসির প্রাপ্তির টুর্নামেন্ট। হাভিয়ের মাসচেরানোকে ছাড়িয়ে গড়লেন দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড। স্পর্শ করলেন সবদেশ মিলিয়ে কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড।