শুরু হলো বিজয়ের মাস, ডিসেম্বর। দীর্ঘ তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙ্গালী জাতিকে বাঁচাতে একাত্তরের ৭ই মার্চ মুক্তি সংগ্রামের ডাক দেন বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ডাকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ।
নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চণার উপনিবেশ থেকে এই মাসেই বিজয় লাভ করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালী। পায় নিজেদের একটি স্বতন্ত্র ভূ-খন্ড, একটি স্বাধীন দেশ ‘বাংলাদেশ’। বিজয়ের ৫০ বছর পেরিয়ে স্বদেশভুমি আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
বাঙালীর হৃদয়ে বিজয়ের বৈজয়ন্তী উড়িয়ে আসে ডিসেম্বর মাস। মাসটি যেমন গৌরবের, মহাআনন্দের একই সাথে স্বজন হারানোর শোকেরও বটে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুধু মুক্তিবাহিনী ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে লড়াই ছিলো না। ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো আপামর জনতা। সেই জনযুদ্ধে আলোড়ন উঠেছিলো সারা বিশ্বে।
১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের পথধরে বাঙালির স্বাধিকারের আন্দোলন ধাপে ধাপে নানা সংগ্রামের ভিতর দিয়েই রচিত হয় স্বাধীনতার পথ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সেই আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিণত হন এবং তাঁর আহ্বান ও নির্দেশে গোটা জাতি চূড়ান্ত স্বাধীনতার জন্যে জীবন-পণ লড়াইয়ে নামে।
ন’মাস চলে পাকিস্তানি বাহিনীর এই গণহত্যা, ধর্ষন, লুট, অগ্নিসংযোগ, সম্পত্তি দখলের জঘন্য অপরাধ। এক-কোটি লোক দেশান্তরী হতে বাধ্যহয়। একাত্তরের ২৫শে মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও চূড়ান্তবিজয় অর্জিত হয় ১৬ই ডিসেম্বর। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস সদস্যরাও পরাজয় এড়াতে মেতে ওঠে বাঙালী নিধনযজ্ঞে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এক সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ফসল। যে রাজনীতি ছিল মৌলিক আদর্শভিত্তিক নতুন মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার।
বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে একটু একটু করে বদলেছে স্বদেশভূমি। দেশ এখন পৌঁছে গেছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। একাত্তরের অপশক্তি এখনো নানা অপতৎপরতা চালালেও সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তরুণ প্রজন্ম নতুন উদ্দীপনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশপ্রেম, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে।