মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নন্দীর বাজার থেকে ঝগড়ার চর বাজার পর্যন্ত ১০টি স্থানে একযোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ মে বৃহস্পতিবার সড়ক উন্নয়ন কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে প্রায় দশ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সকাল সাড়ে ১০ ঘটিকায় শুরু হয়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচি দুপুর সাড়ে ১২ঘটিকায় শেষ হয়। মানববন্ধন কর্মসূচির মূল আলোচনা কেন্দ্র বিন্দু ছিল চৌধুরী বাড়ি মোড়।ইমতিয়াজ চৌধুরী শৈবালের সঞ্চালনায় এবং চৌধুরী বাড়ি মোড় বাজার কমিটির সভাপতি সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, শেরপুর জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক সভাপতি শাকিল চৌধুরী, আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার ও উন্নয়ন কমিটির মূখ্য সমন্বয়ক এনামুল হক, কামারেরচর চরবাবনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গালিব চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম শিপু, সাহাব্দীর চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহসেনা বেগম জেরিন, কামারের চর বাজার দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম-আহবায়ক খোরশেদ আলম প্রমুখ। মানববন্ধনে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়ায় সারাদেশ আজ পাল্টে গেছে। কিন্তু শেরপুরবাসী আজো অবহেলিত।
শেরপুরবাসীর প্রায় ১শ বছরের দাবি রেল সংযোগ এখনো অধরা। এখনো শেরপুরে কোন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ বা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে নাই। তারপরও শেরপুর সদর সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর আরো ৭ টি উপজেলার মানুষের চলাচলের প্রধান পথ এই রাস্তা সংস্কারের নামে দীর্ঘদিন যাবত ফেলে রাখা হয়েছে। এটি কাম্য নয়, তাই আমরা এই সড়কের উন্নয়ন কাজের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।’
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক সভাপতি শাকিল চৌধুরী বলেন, ‘ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এই সড়কের সংস্কার কাজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করার পরও কেন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হলো না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানাই।
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কাজ ১৫ মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কেন দু’দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরেও এমন বেহাল অবস্থার তা এলাকার মানুষের বোধগম্য নয়। তাই আমরা এলাকাবাসী যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাই আন্তঃ উপজেলার এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের।
এই কর্মসূচির সমন্বয়ক এনামুল হক বলেন, ‘ প্রতিদিন এই অঞ্চলের মানুষ ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এই বৃহৎ চরাঞ্চলে প্রচুর শাক সবজির আবাদ হয়। কিন্তু কৃষি প্রধান এই অঞ্চলের মানুষ আজ এই ভাঙাচোরা সড়কের কারণে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। প্রতিদিনই আটো রিক্সা, সিএনজি, বাস সহ বহু যানবাহন যান্ত্রিক ভাবে বিকল হয়ে পরছে। এতে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ উন্নয়নের স্বার্থে এ অঞ্চলের মানুষ শতবর্ষী বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ নিধন কষ্ট সত্যেও মেনে নিয়েছিল। কিন্তু যেভাবে এই রাস্তা কাজ দীর্ঘদিন যাবত ফেলে রাখা হয়েছে। তা দেখে আজ এলাকার মানুষ উদ্বিগ্ন। তাই এলাকাবাসি আজ এই সড়কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে।’
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের রতন চৌধুরী বলেন, এই এলাকার বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি মহোদয়ের কাছে আমাদের চরবাসির দাবি শেরপুর অঞ্চলের এই সড়কটি যেনো শেরপুর সড়ক বিভাগের আওতায়ভূক্ত করা হয়। একই সাথে কামালপুর থেকে নন্দীর বাজার পর্যন্ত এই রাস্তার উন্নয়ন কাজ যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।
মানববন্ধনের সঞ্চালক ইমতিয়াজ চৌধুরী শৈবাল এসময় লিখিত স্মারকলিপি পাঠ করেন। এছাড়া অন্যান্য স্থানের মানববন্ধনে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় বক্তারা বলেন, শেরপুর সদর উপজেলার নন্দীর বাজার থেকে জামালপুরের বক্সীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে সড়কের নন্দীর বাজার-ঝগড়ার চর অংশ চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উক্ত সড়ক সংস্কার ও প্রসস্থকরণের জন্য পিচ ঢালাই তুলে সংস্কার না করেই ফেলে রাখা হয়েছে প্রায় আড়াই বছর। যদিও ২ নভেম্বর ২০১৮ খিষ্টাব্দে উন্নয়ন কাজ উদ্বোধনের পর ১৫ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠন ও সড়কে চলাচলকারীদের জোর দাবি সত্যেও সড়ক সংস্কার কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। জরাজীর্ণ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন এবং প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য ছোট-বড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়াও সড়কের ধুলা বালির কারণে এর দু’ধারের অসংখ্য মানুষ শ্বাসকষ্ট সহ অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগে ভুগছেন। এই সড়ক দিয়ে কোনো মুমূর্ষু রোগী অথবা গর্ভবর্তী নারীকে উপজেলা-জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই আঞ্চলিক মহাসড়ক পাকা করণের পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে নন্দীর বাজার-ঝগড়ার চর সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা আর কখনও দেখা যায়নি। সড়কটির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমরা চরাঞ্চলবাসি অভিভাবকহীন অবস্থায় বসবাস করছি। আমাদের দেখার যেন কেউ নেই। যেহেতু এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি জামালপুর সদর উপজেলার বক্সিগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রৌমারি, রাজিবপুর I শেরপুরের শ্রীবরদি উপজেলার মানুষ সহ সদরের কামারের চর, চরমোচারিয়া ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষের প্রধান যোগাযোগ পথ। এবং এই সড়কের দু’ধারে অসংখ্য ছোট বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র, স্কুল, কলেজ রয়েছে। তাই এই আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটির উন্নয়ন কাজ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত বাস্তবায়নেয় দাবি জানান