২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১১:০১
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১১:০১

সংঘাত না, আমরা উন্নতি চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধ না, আমরা শান্তি চাই। সংঘাত না, আমরা উন্নতি চাই।

রোববার (২৯ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বাঙালি জাতিরই নন, তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির ও শান্তির দূত। এজন্য বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাঁকে জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।

তিনি বলেন, ২৫শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জাতির পিতা তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়— এই নীতি তিনি ঘোষণা করেছিলেন। তখন থেকেই বাংলাদেশ বিশ্বের শান্তিপ্রিয় ও বন্ধুপ্রতীম সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত সকল শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করার দিকে মনোনিবেশ করেছি।

সমসাময়িক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার ও অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় এবং অরাষ্ট্রীয় অপশক্তিসমূহ নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে এই নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আমরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করে তুলছি।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ সব সময় চায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। যুদ্ধ না, আমরা শান্তি চাই। সংঘাত না, আমরা উন্নতি চাই। জাতির পিতার শান্তি সেনানীরূপে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়। আজ আমরা সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরবের ৩৪ বছর উদযাপন করছি।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বিগত ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রতিটি শান্তিরক্ষী তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন। আজ সমগ্র বিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বজনবিদিত।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ মিশনে কার্যকর অংশগ্রহণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অবস্থানকে সুসংহত করেছে। একইসঙ্গে সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশসমূহের সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১২১টি দেশের ৭৫ হাজার ৫১৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮২৫ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন যা বিশ্বে নিয়োজিত সর্বমোট শান্তিরক্ষীর ৯ দশমিক দুই শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫১৯ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী তাদের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে চলেছে। আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশে ৫৫টি মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ১৩টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছেন।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের ১৬১ জন শান্তিরক্ষী শহিদ হয়েছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত বিগত এক বছরে ২ জন শান্তিরক্ষী শহিদ হয়েছেন। আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাচ্ছি।

এ সময় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারী সকল শান্তিরক্ষীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

Facebook
Twitter
LinkedIn