২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৪:১৭
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৪:১৭

সন্ত্রাস, চুরি, লুটপাট, ছিনতাই- চারদিকে শুধু অপরাধ আর অপরাধ…

রাতের আঁধারে তালা কেটে দোকানের মালামাল লুট। ঢাকায় ও আশে পাশের এলাকায় শুরু হয়েছে চোর বাটপারদের  এ এক নতুন ও আধুনিক পদ্ধতির ডাকাতি সন্ত্রাসী। নীরব রাতের মত পুলিশ প্রশাসনও যেন এইসব বিষয়ে কেন জানি নীরব ভূমিকা পালন করছে। এলাকায়, মহল্লায়, পাড়ায় পাড়ায় আগে সবসময় রাতেও টহল পুলিশ দেখা যেত। মায়েরা সন্তানদের ঘুম ভাঙাতো- নাইট গার্ডের বাঁশির আওয়াজকে, ঔ রাক্ষস আসছে… বলে? এখন যেন লুটেরা রাক্ষসের ভয়ে এসব পাহাড়াদারেরাই ভয়ে লেজ গুটিয়ে নেয়। অনেকে পুলিশ ও পাহাড়াদারদের গাফিলতি নিয়ে ভাগ বাটোয়ারার সুবিধাভোগী বলেও কটু মন্তব্য করে থাকেন। গত পরশু রাতেও ঢাকা দক্ষিণের, ওয়ার্ড-৪, মাদারটেক মসজিদ গলির এক নতুন দোকানে মধ্যরাতে- দোকানের তালা কেটে নগদ টাকা ও কয়েক হাজার টাকার মাল লুট করে নিয়ে যায়। সরেজমিন রিপোর্টে উক্ত দোকানী জানালো কয়দিন আগেও ঠিক এইভাবে সিংগাপুর রোডের ওখানে একটা ওষুধের দোকানের তালা কেটে টাকা ও দামী ওষুধপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে। লোকমুখে জানা গেছে এরা দল বেঁধে ছোট আকারের পিকাপ গাড়ি নিয়ে আসে।  সাথে শাটার ও তালা কাটার আধুনিক সরঞ্জামাদি অস্ত্রপাতিও যে থাকে তা তাদের অপরাধ ও সাহসিকতার নমুনা দেখেই বোঝা যায়। চোর গ্রুপ বোঝাই যায়, এরা পরিকল্পনা করেই রাতের এই লুটের মিশনে নামে।

এরা ভাগে ভাগে রাতে দোকান লুটের কাজে নামে। কেউ কেউ রাস্তার মুখে থাকে পাহাড়ায়। কেউবা কাটে তালা। কেউ শাটার তুলে ঢুকে যায়, বাসায় অথবা দোকানে। ভেতর থেকে এরপর তাদেরই কোন সদস্য মালামাল বের করতে থাকে। আর বাকিরা দোকানের জিনিসপত্র সব হয়ত গাড়িতে নিয়ে তুলে।

মাদারটেক মাঠ মসজিদের
মোয়াজ্জিন আঃরাজ্জাক জানালেন, ফজরের আজান দিতে তিনি মসজিদে যান। ৫.৩০ মিনিটে জামাত। কিন্তু আজান দিতে না দিতেই বাসা থেকে উনার স্ত্রী জানালেন বাড়ির নিচের দোকান লুটপাট হচ্ছে।

আগে আশে পাশের কয়েকটা বাড়ির মেইনগেট বাইরে দিয়ে ওরা আটকে দেয়। যেন লোকজন টের পেয়ে গেলে বাড়ির ভেতরের কেউ সহজে বের হয়ে এসে চোরদের ধরতে না পারে। এরা
দোকানের তালা কেটে শাটার হালকা ফাঁকা করে ছোট বালককে দোকানের ভিতরে ঢুকিয়ে মাল সামানা বের করে পিকাপে তুলে নেয়। সামনে মাহে রমজান, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এভাবে রাত বিরাতে কয়েকটা দোকান টার্গেট করে লুটতরাজ করার মিশনে নেমেছে এই সন্ত্রাসী চক্রটি। চড়া দামে হয়ত কোন আঁতাত করা ব্যবসায়ীর নিকট এরা এসব লুটেরা পন্য নিয়ে বিক্রি করবে। এমন ভাবে এরা আসে ঘুমন্ত মানুষ ঘুমের চোখে আওয়াজ শুনে যেন মনে করে কেউ ফজরের পর দূরে কোথাও বাসা বাড়ির মাল নিয়ে বাসা বদলাচ্ছে। মোয়াজ্জিন ও খাদেম ছুটে আসতেই এরা পিকাপ নিয়ে সটকে পড়ে! সকাল হওয়ার সাথে সাথেই
ততোক্ষণে সেই রাতের ঘটনায় হয়ত কতজন অল্প পুঁজির এমন ব্যবসায়ির চোখ ভরে উঠবে হাহাকারে…
এ দায় কার? কে নেবে এদের বুকভরা কষ্টচাপা কান্নার আহাজারি? অনেকে এরপর থানায় জিডি করতেও যেতে চায় না। পুলিশ আসলে অযথা হয়রানি হবে, পুলিশের পেছনে বাড়তি খরচ হওয়ারও ভয়ও পান এমন দোকানীরা। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ও পুলিশের ভেতর যে ব্যবধান, সেটা আসলে থানা পুলিশকেই ঘু্চাতে হবে। পুলিশ যে নাগরিকের নিরাপত্তার রক্ষক, সেবক, সেটা তাদের আচরণ ও ব্যবহার দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। আর প্রতিটা এলাকায় এলাকায় বাড়িওয়ালাদেরও তাদের দোকানী, ভাড়াটিয়াদের সম্পদ রক্ষায়, বাড়াতে হবে জোড়দার নিরাপত্তার ব্যবস্থা। প্রয়োজনে সি সি ক্যমেরাও বসাতে হবে মহল্লায় মহল্লায়। বাড়িতে বাড়িতে। পাহাড়াদারদের হতে হবে আরও দায়িত্বশীল। এবং সৎ। সকাল না হওয়া পর্যন্ত  প্রয়োজনে পাহাড়াদারদের কাজে বলবৎ থাকাটা জরুরি। বিষয়টি একটি এলাকার ঘটনা হলেও দেশের প্রতিটা এলাকার জন্য হতে পারে একটি দিকনির্দেশনা।

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি

Facebook
Twitter
LinkedIn