পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরো সবুজ একটি ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে পিফোরজি (পার্টনারিং ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল গোলস ২০৩০) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়া নেতাদের আরো নিবিড়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে খাদ্য-পানি-জ্বালানিসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগকারী, নীতি নির্ধারক ও সৃজনশীল উদ্যোক্তাদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল পিফোরজির সিউল সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় এ বিষয়ে তিনটি সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি। ‘ইনক্লুসিভ গ্রিন রিকভারি টুওয়ার্ডস কার্বন নিউট্রালিটি’ প্রতিপাদ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পিফোরজির দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তিন সুপারিশের প্রথমটিতে বলেন, খাদ্য, পানি, জ্বালানি, নগর এবং চক্রাকার অর্থনীতি হলো পিফোরজি এর মনোযোগের মূল পাঁচটি ক্ষেত্র। এসব ক্ষেত্রে পিফোরজিকে আরো কর্মভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে এবং বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক, নীতিনির্ধারক এবং সৃজনশীল উদ্যোক্তাদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব ক্ষেত্রে সেরা কর্মপদ্ধতিগুলোর বিনিময় আরো বাড়াতে হবে। দ্বিতীয় সুপারিশে শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধি এবং ২০৩০ সালের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে পুরো সমাজকে নিয়ে এগোনোর পাশাপাশি পুরো বিশ্বকে নিয়ে এগোনোর মনোভাব জরুরি।আর তৃতীয় সুপারিশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরো সবুজ একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণে পিফোরজি সম্মেলনে অংশ নেয়া নেতৃবৃন্দকে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে নানা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির দিকে বিশ্বকে নিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর সেই লক্ষ্যে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবে অভিযোজন কার্যক্রম জোরদার করাসহ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব বিষয়ও সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পানি বাংলাদেশের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। পানির যথাযথ ব্যবহার এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ একশ’ বছর মেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ প্রথম স্বল্পোন্নত দেশ, যারা নিজস্ব সম্পদ দিয়ে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে; অভিযোজন ও প্রশমন ব্যবস্থায় প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। পিফোরজির সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বল্প কার্বন নিঃসরণ করে উন্নয়নের কৌশল অনুসরণ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর যে পরিকল্পনা তার সরকার নিয়েছে, তার বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ২০৪১ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ৪০ গিগা ওয়াটে পৌঁছাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০১৭ সালে পিফোরজি নামে এই বৈশ্বিক উদ্যোগ শুরু হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও চিলি, কলম্বিয়া, ডেনমার্ক, ইথিওপিয়া, ইন্দোশিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভিয়েতনাম পিফোরজি নেটওয়ার্কের সদস্য। এ ছাড়া ডব্লিউআরআই, ডব্লিউএএফ, আইএফসি, জিজিজিআই এবং সি৪০ এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে রয়েছে।