২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৫:০২
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৫:০২

সরকার পুরো প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ফেলেছে : মির্জা ফখরুল

সরকার পুরো প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তারা একে একে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগিডিয়ার হান্নান শাহের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েক দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম ১৭ জন সাময়িক বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটাও দলীয়ভাবে করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের ন্যূনতম যোগ্যতা নেই। আজকে প্রশাসনে দলীয়ভিত্তিতে লোক নেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতেও লোক নেয়া হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে। যেখানে চাকরির জন্য যাবেন সেখানেই দলীয় ভিত্তিতে নেয়া হয়। এইভাবে আজকে পুরো প্রশাসনকে সরকার দলীয়করণ করে ফেলেছে। রাষ্ট্রকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। যারা আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে আছে, তারা একে একে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই সময়টা বাংলাদেশের সবচাইতে দুঃসময়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর হয়েছে। এত খারাপ সময় আমরা আগে কখনো দেখিনি। আমরা স্বৈরাচার দেখেছি, আমরা একনায়কতন্ত্র দেখেছি। কিন্তু এই যে ভয়াবহভাবে ফ্যাসিবাদ গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং জাতির সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এটা আমরা অতীতে কখনো দেখিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে মানুষ কথা বলতে পারে না, কেউ কথা বলার সাহস পায় না। আমি কালকে একটি রেস্টুরেন্টে চা খেতে গিয়েছিলাম। আমি যাওয়ার পর সেখানে সবাই ছুটে আসলো। আমরা যাদেরকে বয়-বেয়াড়া বলি। তারা এসে বলছে, স্যার আমরা কেউ গাজীপুরে থাকি, কেউ ভোলায় থাকি, কেউ রাজশাহীতে থাকি। আমরা কেউ এলাকায় থাকতে পারছি না। আমরা মিথ্যা মামলা এবং ওদের (আওয়ামী লীগ) অত্যাচারে পালিয়ে চলে এসেছি। এই রকম অবস্থা বাংলাদেশে এখন শুরু হয়েছে। এ রকম ঘটনা একটা দুটো নয়। প্রায় সব জায়গায় দেখবেন আমাদের ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ছেলেরা এমনকি বিএনপির বয়স্ক লোকেরা এলাকায় থাকতে পারছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকে ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। ৫০০-এর অধিক নেতা গুম হয়ে গেছেন। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তার পরেও তারা নির্বাচনের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। আপনারা তো জেনেশুনে এমন একটা নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করেছেন যেখানে কেউ ভোট দিতে পারে না। আপনারা এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছেন যেখানে কেউ বিচার পায় না। আজকে আপনি যে কোর্টেই যাবেন দেখবেন বিএনপি দেখলে একরকম বিচার আর বিএনপি না হলে অন্যরকম বিচার। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা

অর্থনৈতিক দিকে সরকার চরম দুর্নীতি করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি নাই। দেশ একটি লুটপাটের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। যেখানে যাবেন সেখানেই দুর্নীতি-লুটপাট। মেঘা প্রজেক্টে আরো বেশি মেঘা লুটপাট।’

তিনি বলেন, ‘৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগের একই অবস্থা ছিল। তখনও তারা লুটপাট করতো। তখন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নামটা এখন বদলে এর নাম রাখা উচিৎ ‘নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি’। আজকে তারা ঠিক লুটপাট সমিতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। করোনায় সম্পূর্ণভাবে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা টিকা সংগ্রহের কথা বলে টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সকল অর্জন তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাতা যিনি দীর্ঘ ৯ বছর সংগ্রাম করে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে, বিদেশে পাচার করছে তাদের কিছু হয় না। আর আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে একইভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্ধকার সময়ের পথপ্রদর্শক বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। তিনি একজন সৈনিক ছিলেন। সৈনিকের চরিত্র যুদ্ধ করা। তিনি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন। ১/১১-এ বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের যে পরিকল্পনা তা রুখে দিতে তিনি সংগ্রাম করেছেন। যার জন্য তিনি জেলেও গিয়েছেন। আজকে দেশের এই অবস্থায় তাকে আমাদের খুব প্রয়োজন ছিল।’

ওবায়দুল কাদের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মহামারীতে আক্রান্ত : রিজভী

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মহামারীতে আক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। ওবায়দুল কাদেরের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘একজন নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি প্রতিদিনই বলেন ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এতদিন ছিল করোনার মহামারী এখন ষড়যন্ত্র
তত্ত্বের মহামারী। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে বসে আছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। এমন কোনো ওষুধ নেই, এই মহামারী থেকে ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বাঁচাবে।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আ স ম হান্নান শাহের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, হান্নান শাহ প্রমাণ করেছেন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকলে অন্যায়কারীরা পরাজিত হন। ফখরুদ্দিন, মঈন উদ্দীন পরাজিত হয়েছেন। আজকে হান্নান শাহ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি বিজয়ী হয়েছেন গণতন্ত্রের পক্ষে। সেই সময় যদি আন্দোলন অব্যাহত না থাকতো তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আজো কারাগারে থাকতে হতো। সেই সময় ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহসহ কিছু লোক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে তারা ওই সময় মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু সেই আন্দোলনের ধারা এখন অব্যাহত নেই।

এ সময় তিনি আরো বলেন, মঈন উদ্দীন-ফখরুদ্দিনের রেখে যাওয়া কাজ একনিষ্ঠভাবে এখন করছে সরকার।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন, সেখানে আন্দোলন হয়েছে। তাই তিনি বলেছেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দেশে যখন দুর্নীতি হয়, মা বোনরা ধর্ষণের শিকার হয় তখন ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না?

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায়ই বলেন বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। সব দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন বিএনপি গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য সামনের দরজা দিয়ে হোক আর যে দরজাই হোক কাঠের লোহার দরজা ভেদ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, এখন আওয়ামী লীগ নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে কিছু মিডিয়ার সাহায্যে যে ইভ্যালির টাকা লন্ডনে গেছে। এরকম মিথ্যা প্রচার তারা চালানোর চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে আবারো গর্জে উঠতে হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম প্রমুখ।

Facebook
Twitter
LinkedIn