” কালবেলা ” আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকায় এগিয়ে চলা ‘এক সংগ্রামী নারীর’ দৃশ্যকল্প । চলচ্চিত্রটিতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে -বিপন্ন মানুষের প্রতিচ্ছবি। সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদ। আশ্রয়ের সন্ধানে অনিশ্চিত পথযাত্রা। এবং অবরুদ্ধ শহরের থমথমে চিত্রপট। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে পাক বাহিনীর পাশবিক নির্মমতার নিদারুণ ইতিহাসের দগদগে স্মৃতিচিহ্ন
অন্যতম অসাধারণ এই চলচ্চিত্র, কালবেলা …
চলচ্চিত্রটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহমিনা অথৈ, কালবেলায় যাকে আমরা দেখব, ‘সানজিদা চরিত্রে। অথৈ এর বিপরীতে আছেন, শিশির আহমেদ । যার প্রাণবন্ত অভিনয়ও দর্শক মন নিয়ে যাবে, ১৯৭১ সালের পটভূমিকায়। ব্যতিক্রমী গল্পে অথৈ ও শিশিরকে যে আপন মহিমায় ফুটিয়ে গেছেন, চির ভাস্বর এই নির্মাতা, সেটা স্থিরচিত্রেও যেন জীবন্ত ! কালবেলা’র অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন – মাসুম বাশার, মিলি বাশার, জয়ন্ত চট্রোপাধ্যায়, লুৎফর রহমান জর্জ, শেখ মাহবুবুর রহমান, সাইকা আহমেদ, জুলফিকার চঞ্চল, কোহিনুর আলম, নওশের আশফাক, সুমন আহমেদ বাবু, মোরসালিন, শিশুশিল্পী সিয়াম ও তানভীর মাসুদসহ প্রমুখ শিল্পী। চলচ্চিত্রটি চিত্রগ্রহণ করেছেন রিপন রহমান খান । সম্পাদনা করেছেন জাতীয় পদকপ্রাপ্ত সামির আহমেদ। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন জাতীয় পদকপ্রাপ্ত আরও একজন দিকপাল, তিনি ফরিদ আহমেদ । সাইদুল আনাম টুটুলের মত যাকে আমরা হারিয়েছি এ বছর করোনা মহামরারিতে । কালবেলার সুরের মুর্ছনায় হারানো দু’জন ব্যক্তিত্বকে দর্শক কি করে ভুলে থাকবে ?
সাইদুল আনাম টুটুল নিজের প্রিয় একটি ইচ্ছের গল্প নিয়ে শুরু করেছিলেন ‘কালবেলা’ চলচ্চিত্রটি। ২০১৮ সালে । একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটির বিষয়বস্তু। বরেণ্য প্রথিতযশা, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও নির্মাতা শুটিং শেষ করে ঢাকায় আসেন। কিন্তু মানুষটির আকস্মিক মৃত্যু যেন সবকিছু নিস্তব্ধ করে দেয় । দিনটি ছিল ১৮ ডিসেম্বর … হঠাৎ হৃদরোগে তিনি চলে যান, সবাইকে কাঁদিয়ে। পৃথিবীর মায়া ছেড়ে ।
চলচ্চিত্রটি নিয়ে হঠাৎ দুশ্চিন্তার মেঘ নেমে আসে। উনার পরিবার ও ছবিটির পুরো টীমের জন্য যা ছিল, কঠিন এক মুহূর্ত। সব আশঙ্কার বেড়াজাল পেরিয়ে সাইদুল আনাম টুটুলের স্ত্রী, চলচ্চিত্রটির প্রযোজক অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম অক্লান্ত পরিশ্রম করে ২০২০ সালে কালবেলার বাকী কাজ সম্মুন্ন করেন পরিচালকের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু দুভাগ্যক্রমে করোনার পাদুর্ভাবে চলচ্চিত্রটিকে দর্শক সমীপে আনা সম্ভব হয়নি। তিনি নিজেও বলেন, ‘‘ আমার সৃষ্টি নয়, এটা উনার ভালোবাসার প্রেরণা ‘কালবেলা ’। আমি হয়ত তাঁর মত শেষ করতে পারিনি। কিন্তু শেষ হয়েছে। এটুকুই আত্মতৃপ্তি। সবার জন্য আনন্দের ‘’ । চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি থেকে ১০ ডিসেম্বর ‘কালবেলা’র শুভমুক্তির তারিখ নেয়া হয়েছে । দেশের বাণিজ্যিক প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি সবাই দেখতে পারবে। ২০১৭-২০১৮ সালের অর্থ বছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে সরকারি অনুদান পায় ‘কালবেলা। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খুলনা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে শুটিং করা হয় ।
চলচ্চিত্র ও নাটকের সম্পাদনায়ও আমরা গুণী এই নির্মাতার অভাবনীয় সাফল্য দেখেছি। নাট্য ও চলচ্চিত্র জগত যে কি ‘‘অমূল্য সম্পদ’’ হারিয়েছে , সাইদুল আনাম টুটুলের শেষ নিবেদন – ‘কালবেলা’ চলচ্চিত্রটিই বলবে সেই কথা। সাইদুল আনাম টুটুল ১৯৭৯ সালে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ চিত্রসম্পাদক হিসেবে জাতীয় চলিচ্চিত্র পদক পান । এছাড়াও ঘুড্ডি, দহন, দিপু নাম্বার টু, দুখাই সহ বেশ কয়েকটি নামকরা চলচ্চিত্রের তিনি সম্পাদক ছিলেন। কালবেলার ট্রেইলার অবমুক্ত হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হবে। প্রখ্যাত নির্মাতাকে হারিয়ে আমরা শোকে বিহ্ববল। কিন্তু সবার জন্য আনন্দের খবর, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবসের মাসেই আমরা ‘কালবেলা’ চলচ্চিত্রটি সবাই পরিবারসহ উপভোগ করতে পারব। শুভমুক্তি কালবেলা। মুক্তিযুদ্ধের জীবনগাঁথা কালবেলা।
সবার হৃদয়ের কালবেলায় চিরদিন বেঁচে রবে একটি নাম, সাইদুল আনাম টুটুল স্ব-শ্রদ্ধায় নিবেদিত যাঁর সৃষ্টি, মিশে রবে, শেষ নিবেদনে …
মারুফ আহমেদ, বিশেষে প্রতিনিধি