টেস্টে বাংলাদেশের একমাত্র ২০০ উইকেটের মালিক সাকিব আল হাসান। তারপর মাত্র দু’জনের আছে একশ’ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব। অন্যদিকে ব্যাট হাতেও কম নয় সাকিব। ৫ সেঞ্চুরি ও ২৪ ফিফটিতে টেস্টে সাকিব আল হাসানের সংগ্রহ ৩৮৬২ রান। টাইগারদের টেস্ট দলের নেতৃত্বও ছিল তার হাতে। কিন্তু গেল বছর আইসিসি নিষিদ্ধ করে তাকে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের নেতৃত্ব পান তরুণ মুমিনুল হক সৌরভ। সেরা অলরাউন্ডারকে ছাড়াই ভারত, পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে হয় ৪ টেস্ট।
গত ২৯শে অক্টোবর নিষধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন সাকিব। সব ঠিক থাকলে জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামবেন আর্ন্তাতিক ক্রিকেট খেলতে। দলে এমন একজনকে পেয়ে দারুণ স্বস্তি বোধ করছেন মুমিনুল। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তরুণ অধিনায়ক হিসেবে এটা (সাকিবের ফেরা) আমার জন্য স্বস্তির বিষয়। সাকিব ভাই থাকলে দলে ভালো ভারসাম্য তৈরি হয়। ভালো দিক আমাদের জন্য। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার।’
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন মুমিনুল। তার হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে দুবাইয়ে। দেশে ফিরে রিহ্যাব শুরু করেছেন তিনি। চোটপ্রাপ্ত আঙুলে চলছে ফিজিওথেরাপি। তাই শেষ পর্যন্ত ফিট হয়ে টেস্ট খেলতে পারবেন কিনা এখনো প্রশ্ন আছে। যদিও বিসিবি চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী আশাবাদী টেস্টের প্রস্তুতি ম্যাচেই মাঠে ফিরবেন মুমিনুল। আশার সংবাদ শোনালেন টেস্ট অধিনায়ক নিজেও। তিনি বলেন, ‘পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। প্রস্তুতি ম্যাচ আছে টেস্ট সিরিজের আগে। আশা করছি টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে পারবো।’
গেল বছর বাংলাদেশ দলের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মিশন শুরু হয় ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ দিয়ে। এই সিরিজেই টাইগারদের নয়া অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলের চ্যালেঞ্জ শুরু হয়। দুই টেস্টে বড় ব্যবধানে হেরে দেশে ফিরে আসে তার দল। এরপর পাকিস্তান সফরে দুই টেস্টের সিরিজ। সেখানে প্রথম ম্যাচেও বাজে হার। দেশে ফিরে এসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নয়া অধিনায়ক টেস্টে প্রথম জয় তুলে নেয়। এরপর করোনা মহামারির কারণে সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে পাকিস্তান সফরে যেতে পারেনি বাংলাদেশ দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজটিও দুই দফায় স্থগিত হয়। সব মিলিয়ে মার্চের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা হয়নি টাইগারদের। সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুমিনুলকে নিতে হবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চ্যালেঞ্জ। তবে নয়া অধিনায়ক চ্যাম্পিয়নশিপের মিশন মনে করে বাড়তি চাপ নিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘টেস্ট খেলতে গেলে চ্যাম্পিয়নশিপ চিন্তা করে খেলতে পারবেন না। করোনার পর বাংলাদেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক খেলা শুরু হচ্ছে। আমরা যারা সুযোগ পাবো তাদের সবাই দেখবেন ১০০ ভাগ দিয়ে ভালো করার চেষ্টা করবে। ওইভাবে চিন্তা করলে আমরা টেস্ট সিরিজটা ভালোভাবে শেষ করতে পারবো। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চিন্তা করলে চাপ আসবে, সবার প্রত্যাশা আসবে। অনেক নেতিবাচক বিষয় চলে আসবে। এসব চিন্তা না করে শুধু ভালো খেলার সুযোগটা কাজে লাগানোর প্রয়োজন।’ এত দিন পর টেস্ট খেলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘শুধু আমরা না। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে সবারই একটু চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করা ভালো। করোনার পর শুধু আমরা না, বিশ্বের অনেক দলকেই এ সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। যারা অনেক বেশি খেলছে, তারা আবার জৈব সুরক্ষা বলয়ের ভেতরে থাকবে। এটাও একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। জিনিসটা আপনি কিভাবে নেবেন সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ বাংলাদেশ সফরে আসার আগে ক্যারিবীয় দল ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট হেরেছে। দলটির বর্তমান বাজে ফর্মও আছে আলোচনায়। সেই হিসেবে টাইগারদের জন্য কি লড়াইটা সহজ হবে! মুমিনুল বলেন, ‘এভাবে ধরতে গেলে অনেক কিছুই চলে আসবে। ওরা এর আগে তিন-চারটা সিরিজ খেলেছে। জৈব সুরক্ষায় খেলেছে। মানসিকভাবে একটু পিছিয়ে থাকতে পারে। অবশ্য একটা টেস্ট সিরিজ হেরে আসলে এটা আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। আর ওরা টানা সিরিজ হেরে আসছে এর মানে এই না যে ওদের আপনি এখানে হারিয়ে দেবেন। ওদের সঙ্গে খেলতে হলে আপনার পুরো চেষ্টা দিয়েই খেলতে হবে।’ জৈব সুরক্ষা বলয়ে খেলতে গিয়ে ক্রিকেটারদের মানসিক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। ক্রিকেটারদের মতামত একই। মুমিনুল বলেন, ‘এটা পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো এখনো খেলিনি জৈব সুরক্ষায় থেকে। খেলার পর অভিজ্ঞতা বলতে পারবো। এখন যতদিন ভ্যাকসিন না আসছে এভাবেই খেলতে হবে। এটাকে মাথায় না নিয়ে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হবে।’