২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৪:৪১
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৪:৪১

সাজানো হচ্ছে দুই পাড়ের পুরো এলাকা

দুর্নীতিচেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন সগর্বে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম সেতু। গতকাল রবিবার (১২ জুন) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু বরণের জন্য প্রস্তুত। মূল সেতুর লাইট লাগানোর কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। কিছু কিছু জায়গায় ধোয়ামোছার কাজ চলছে। 

গতকাল পদ্মা সেতু পাড়ে বাংলাদেশের হার না মানার গল্প বললেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বললেন এই সেতু নির্মাণের নেপথ্যর কথা। পাশাপাশি জানালেন সেতুটির উদ্বোধন ঘিরে অন্তর্ঘাতমূলক আশঙ্কার কথাও। গতকাল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আয়োজনে সাংবাদিকদের সরজমিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গর্বের পদ্মা সেতু এলাকায়। সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ভায়াডাক্ট ছাড়া ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে নিজের সক্ষমতা জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ২৫ জুন সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে পদ্মা সেতু যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সারা দেশে ২৩ জুন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যুগপত্ভাবে পালন করবে দলটি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘিরে সেতু এলাকায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। দুটি ম্যুরালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে খুবই জমকালো। মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৬৪টি জেলাতেও দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ দেশজুড়ে উৎসব পালন করা হবে। ২৫ জুন সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেতু পেরিয়ে জাজিরা প্রান্তে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের পর তিনি যোগ দেবেন দলীয় জনসভায়। মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ীতে উদ্বোধনী জনসভার মঞ্চটি করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর আদলে। পদ্মা সেতুর সাতটি পিলার। নিচে প্রবল স্রোত। পিলারের নিচ দিয়ে বয়ে চলছে পালতোলা নৌকা। অধিকাংশ নৌকায় আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা। আবার মাছ ধরার ট্রলারও যাওয়া-আসা করছে। দেখতে ঠিক যেন পদ্মা সেতুই। কিন্তু এটি পদ্মা সেতু নয়, পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি জনসভা মঞ্চ। ইতিমধ্যে ঢাকা ও পদ্মার দুই পাড়ের জেলাগুলোর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। জনসভায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রমতে, প্রথমে নৌকার আদলে জনসভার মঞ্চ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর আদলে মঞ্চ তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে শুধু পদ্মা সেতু উদ্বোধনই নয়, মঞ্চেও চমক থাকবে পদ্মার। মঞ্চের সামনে থেকে দেখে মনে হবে অবিকল পদ্মা সেতুর ওপর মূল জনসভা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসের প্রতীক তা প্রমাণ করতেই এ উদ্যোগ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। জনসভার পর ফানুস ওড়ানো থেকে শুরু করে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সেতুর পাশাপাশি সাজানো হচ্ছে দুই পাড়ের পুরো এলাকা। এদিন নদীতেও থাকবে সুসজ্জিত নৌকা। ক্ষমতাসীনদের প্রত্যাশা, শুধু পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের মানুষই নয়, উদ্বোধনের দিন সারা দেশের মানুষ এই আনন্দ উত্সবে অংশ নেবে। কেউ সমাবেশস্থলে এসে, আবার কেউ টেলিভিশনের মাধ্যমে। আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উৎসবে মেতে উঠবে। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আনন্দ মিছিল, শোভাযাত্রা, আতশবাজিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনন্দ উৎসব করা হবে।

গতকাল পদ্মা সেতুর মাওয়া ঘাট প্রান্তে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালি ফসল। বঙ্গবন্ধু কন্যা এই সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ দুর্নীতি করে না। তিনি বলেন, আগামী ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। পদ্মা সেতুর স্থায়িত্ব ধরা হয়েছে ১০০ বছর।

মন্ত্রী বলেন, এই সেতু শেখ হাসিনার স্বপ্নের সেতু। এই সেতু আমাদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার সেতু। এই সেতু একদিকে সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক, অন্যদিকে আমাদের যে অপমান করা হয়েছে তার প্রতিশোধের সেতু। এই সেতুর জন্য শুধু শেখ হাসিনাকে নয়, বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ায় শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে জোর গলায় বলেছিলেন, আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। সেদিন আমাদের আশপাশে যারা ছিল তারা অনেকেই বিদ্রূপ করেছে। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি আমরাও পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বব্যাংক, ড. মোহাম্মদ ইউনূস, খালেদা জিয়াসহ সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এরকমই নির্দেশ দিয়েছেন। ২১ জেলার গাড়ি ৬ মিনিটে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকায় ঢুকলে রাজধানীতে যানজট বাড়বে কি না— এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে সংশয় ছিল। সেটা হয়েছে। যানজটও আমরা জয় করতে পারব।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, একটা সময় টোল আদায় হবে অটোমেটিক সিস্টেমে। যারা কার্ড করবে তারা সরাসরি চলে যেতে পারবে। তবে এটা করতে একটু সময় লাগবে। এখন নগদ টাকায় টোল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিম, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব হাসান জাহিদ তুষার, সাখওয়াত হোসেন মুন প্রমুখ

Facebook
Twitter
LinkedIn