বইমেলার দিনলিপি
দেখতে দেখতেই চলে যাচ্ছে। মহান মাস ফেব্রুয়ারির ভাষার মাস। আজ ৩রা ফাল্গুন ১৪৩০/১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার। অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১:০০টায় এবং চলবে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। সকাল ১১:০০টা থেকে বেলা ১:০০টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। আর সকাল সকাল বইমেলার শুভসকাল। ছুটির দিনটি মুখিয়ে আছে অনেক পরিবারের কর্তারা। যারা এখনও পরিবারকে সময় দিতে পারেননি। আজ বইমেলা হোক এমন সব পরিবারের নিরাপদ শান্তিময় এলাকা। সকাল ১০ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হারিসুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফজিলাতুন নেছা মালিক এবং এস এম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। গতকাল বইমেলার ঠিক পাক্কা পনের দিন অতিবাহিত হলো। নতুন বই বের হয় ৯৭টি।
বিকেলে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : আবদুল হালিম বয়াতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মরমি সাধক ও স্মৃতিচারণ প্রেক্ষাপটে বাংলা একাডেমির অনন্য উদ্যোগ। ফোকলর বিশে^র শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির এই প্রবাহ ধারা অব্যাহত রাখতে গুণীজনকে স্মরণ পরবর্তী প্রজন্মের অনুকরণে ও প্রতিভান্বষণে তা হতে পারে কার্যকর পদক্ষেপ। গতকালের অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জোবায়ের আবদুল্লাহ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোঃ নিশানে হালিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাইদুর রহমান বয়াতি।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের লোকসংগীতাঙ্গনে যেসকল সাধক-ব্যক্তিত্ব নতুন ধারা প্রবর্তনে প্রবর্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মরমি সংগীতসাধক আবদুল হালিম বয়াতি তাঁদের অগ্রগণ্য। সংগীতসৃষ্টি, সুরারোপ এবং পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি এদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তাঁর বিচরণ অতি সামান্য হলেও সংগীতসাধনায় তিনি ছিলেন নিরলস ও উদ্যোগী। প্রকৃতিদত্ত প্রতিভা এবং বৈচিত্র্যময় গ্রন্থপাঠের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানালোকে তিনি নিজেকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি অর্জিত অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞানকে গীত-গানের মাধ্যমে শৈল্পিক সাবলীলতায় উপস্থাপন করে অর্জন করেছেন জননন্দিত শিল্পীর স্বীকৃতি।
আলোচক বলেন, বাংলাদেশের সংগীত জগতের কিংবদন্তি শিল্পী আবদুল হালিম বয়াতি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, কবি, লোকসংগীতের প্রবাদপুরুষ, বিচারগানের প্রবর্তক এবং মুক্তিযোদ্ধা। অপরিসীম মেধা ও প্রতিভার অধিকারী আবদুল হালিম শৈশবে পিতার কাছ থেকে মারফতি ও মুর্শিদি গানের পাঠ গ্রহণ করেন। ধুমকেতুর মতো বাংলা গানের ভুবনে আবির্ভূত হয়ে ধ্রæবতারার মতো স্থায়ী আসন করে নেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম ও সাধন-ভজনের মাধ্যমে তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর রচিত গানের মধ্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সভাপতির বক্তব্যে সাইদুর রহমান বয়াতি বলেন, আবদুল হালিম বয়াতির মতো প্রতিভাবান সাধককবি এদেশে বিরল। বাংলার লোকসংগীতের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর সৃষ্টি ও সংগীতের মধ্য দিয়ে আবদুল হালিম ভক্তশ্রোতাদের অন্তরে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক মাসুদুল হক, কবি ও সম্পাদক এজাজ ইউসুফী এবং গবেষক কাজী সামিও শীশ এবং শিশুসাহিত্যিক রুনা তাসমিনা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, মিহির মুসাকী, শফিক সেলিম, খোকন মাহমুদ এবং ইমরুল ইউসুফ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী এ বি এম রাশেদুল হাসান, শিরিন জাহান এবং তালুকদার মো. যোবায়ের আহম্মেদ টিপু। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন সুবর্ণা আফরিনের পরিচালনায় ‘কিংবদন্তি আবৃত্তি পরিষদ’ এবং মো. রহমতুল্লাহর পরিচালনায় ‘কথাশৈলী আবৃত্তি চক্র’। পুথিপাঠ করেন এথেন্স শাওন। এছাড়াও ছিল প্রণয় সাহার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বাবু সরকার, কোহিনুর আক্তার গোলাপী, মেহেরুন আশরাফ, অঞ্জলি চৌধুরী, গঞ্জের আলী জীবন, সুমন চন্দ্র দাস এবং বিজন কান্তি রায়। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন চন্দন দত্ত (তবলা), সুমন রেজা খান (কী-বোর্ড), মো. মনিরুজ্জামান (বাঁশি), সুমন কুমার শীল (দোতরা) এবং মো. স্বপন মিয়া (বাংলা ঢোল)।
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি
তথ্যসেবাঃ সমীর কুমার সরকার,
পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।
ছবি: অনলাইন