স্তন ক্যানসার বর্তমান সময়ের বহুল পরিচিত একটি রোগ। বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর বহু নারী মারা যান এই স্তন ক্যানসারে।
স্তন ক্যানসারে শুধু যে নারীরাই আক্রান্ত হন তেমন নয়; বর্তমানে এই রোগে পুরুষরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
আগে থেকে সচেতন থাকলে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে স্তন ক্যানসার থেকে বাঁচা যায়। আক্রান্ত হওয়ার পরও ঠিকমতো চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
স্তন ক্যানসার কেন হয়, কাদের হয় এবং এ ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে যুগান্তরের পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রফিক আহমেদ।
কাদের স্তন ক্যানসার হয়?
* যারা নিয়মিত স্ক্রিনিং করান না।
* বয়স ৪০ বছরের বেশি হলে কোনো উপসর্গ ছাড়াই চিকিৎসকের পরামর্শে ছয় থেকে ১২ মাস অন্তর সব নারীকে ম্যামোগ্রাম করাতে হবে। রুটিন পরীক্ষা তো করাতেই হবে।
* ১২ বছরের আগে যদি ঋতুস্রাব শুরু হয়।
* কারও ঋতুস্রাব যদি ৫৫ বছরের পরও চলতে থাকে।
* প্রথম সন্তান যদি ৩৫ বছরের পর হয়। স্তনে অন্য কোনো রোগ হয়।
* যাদের সন্তান হয় না অর্থাৎ বন্ধ্যা।
* যাদের উচ্চতা ৫’-৮” বা তারও বেশি।
* পারিবারিক ইতিহাস অর্থাৎ মা, খালা, বোন এবং রক্তের সম্পর্কযুক্ত। পরিবারের একজনের ক্যানসার হলে অন্যদের মধ্যে ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
কেন স্তন ক্যানসার হয়?
* অনেক সময় টানা জন্মবিরতিকরণ পিল সেবন থেকেও স্তন ক্যানসার হয়।
* ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর যারা হরমোন থেরাপি নিয়ে থাকেন, তাদের এ সমস্যা হতে পারে।
* বন্ধ্যত্বের কারণেও স্তন ক্যানসার হতে পারে।
বাঁচার উপায়
* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
* কায়িক ও শারীরিক পরিশ্রম করুন। প্রতিদিন ঘাম ঝরিয়ে ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করুন।
* প্রতিদিন চার ধরনের ফল ও সবজি খেতে হবে।
* ধূমপান, মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
* জন্মবিরতিকরণ পিল সেবন থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে যাদের বয়স ৩৫ বছর পার হয়েছে।
* ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর অনেকেই হরমোন থেরাপি নিয়ে থাকেন, সেটি থেকে বিরত থাকুন।
* সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন মায়েদের অবশ্যই শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ পান করাবেন। অন্তত দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াবেন।
* ওষুধে রোগ সারায় আবার ওষুধেই স্তন ক্যানসার হয়। যদি কেউ টেমক্সিফেন অথবা রেলক্সিফেন ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করেন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
* বুকের মধ্যে শক্ত চাকা, ঘন পুরো বা অমসৃণ ও একই স্থানে থাকে।
* স্তন ফুলে গেলে গরম অনুভব হলে, লাল হয়ে গেলে অথবা ত্বক কালো হয়ে গেলে।
* স্তনের আকার, আকৃতি যদি দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে।
* স্তনের ত্বকে যদি গর্ত হয় বা কুঁচকে যায়।
* নিপল যদি বেশি চুলকায়, র্যা শ হয় ও ঘা হয়।
* নিপল যদি হঠাৎ করে ফুলে যায় বা অংশ বিশেষ ফুলে যায়।
* হঠাৎ করেই নিপল দিয়ে রক্ত বা সাদা, যে কোনো তরল জাতীয় আঠালো পদার্থ নিঃসরণ হতে শুরু করে।
* হঠাৎ করেই স্তনের মধ্যে ব্যথা শুরু হয়েছে- তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।