দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আজ বুধবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। চার বছর পর দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে হতে যাওয়া বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় জোর দেওয়া হবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক যে প্রেক্ষাপট দাঁড়িয়েছে, সেখানে হাসিনা-জিনপিংয়ের বৈঠক বেশ গুরত্বপূর্ণ। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমাদের অব্যাহত চাপের মধ্যে এই দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক হবে অনেক বড় বার্তা।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেছেন, দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে। এর ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যে অফিসিয়াল পর্যায়ে যেসব বিষয় আলোচনাধীন রয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক আলোচনায় সমাধান সম্ভব হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘২০১৯ সালের পর চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত হবে। সেই বিবেচনায় এ সাক্ষাত অবশ্যই গুরত্বপূর্ণ। দুই শীর্ষ নেতা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। বৈঠকে নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচী নেই। দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই বার্তা হয়ত দুই নেতা দেবেন। আমরা ব্রিকসে যুক্ত হতে চাই। এ ব্যাপারে চীনেরও আন্তরিকতা রয়েছে। ব্রিকসে যুক্ত হতে আমরা চীনের সমর্থন চাইব।’
–
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আফ্রিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতদের সঙ্গে বৈঠক করে বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ব্রিকস সম্মেলনে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। জোহানেসবার্গে যাওয়ার একদিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ করেন মোমেন। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও সময় চূড়ান্ত হয়নি। হেড অফ গভর্মেন্টের সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত শেষ মিনিটে দেয়।’
হাসিনা-জিনপিংয়ের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেছিলেন, ‘আলোচনার শেষ নেই। চীন আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। আমরা অনেকগুলো প্রজেক্ট সই করেছি, এমওইউ সই করেছি, প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের সই। আর প্রাইভেটে ১৩ মিলিয়ন। তাদের থেকে আট বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছি, সেগুলো যেন ত্বরান্বিত হয়; সেটা আলোচনা হতে পারে। এটা একটা গুরত্বপূর্ণ ইস্যু।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমরা ঋণে সুদের হার কম চাই। এটার ওপর আলোচনা হবে। দুনিয়াব্যাপী তাদের ঋণের সুদের হার বেড়ে গেছে। আমরা বলব— সস্তায় বিবেচনা করলে ভালো হয়। জলবায়ু ইস্যু থাকবে, আমাদের নিয়মিত অভিবাসন থাকবে, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ চাই। বাণিজ্য বাড়াতে চাই।’
চীন বাংলাদেশকে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য অনেক ছাড় দিয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেছিলেন, ‘চীন বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য আমাদের অনেক ছাড় দিয়েছে। তবুও বাণিজ্য একপেশে হয়ে গেছে। আমরা বলব বাণিজ্য আরও বাড়াও, বিনিয়োগ করো।’
বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগের বার্তা দিচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকা-বেইজিংয়ের সরকার প্রধানের আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি থাকছে কি না— জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এটা আমাদেরও কনসার্ন (চিন্তা)। পুরো অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দরকার। আমি যেখানে যাই এটা বলি। আমি বৈঠকে থাকলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বার্তা দেব।’
ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যার বৈঠক হবে কি না— জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নয়া দিল্লিতে আলোচনার জন্য রাজি হয়েছেন। ওনার (মোদি) সময় নষ্ট করা ঠিক হবে কি না! তবে এখানে (ব্রিকসে) দেখা তো হবেই।’