বাংলাদেশ পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম একটি। সেই বাংলাদেশকে এখন বহন করতে হচ্ছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা।
বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ। ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৫/৭৬ ভোটে অনুমোদিত হয় যে, ২০০১ সালে থেকে জুন মাসের ২০ তারিখ আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস হিসেবে পালন করা হবে। সে থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ এখন বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর বোঝা বহনকারী একটি দেশ। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ১৯৭৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পালিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বাংলাদেশে। এমনিতেই নানা জটিলতায় এসব শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না, নতুন করে তার সাথে যুক্ত হয়েছে করোনা সংকট।
বিশেষ করে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ভয়াবহ নির্যাতনে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। নতুন পুরাতন মিলে এখন ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা এই শরণার্থী জীবন থেকে মুক্তি ও স্বদেশে ফিরতে চান ।
উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের ডি-৫ ব্লকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। কেউ নিজ দেশ ভিটে-মাটি ফেলে আসে না, আসতে বাধ্য করা হয়েছে। এখন এই জীবন থেকে মুক্তি চাই। বিশ্ববাসীর কাছে অনুরোধ আমাদের অধিকার, সম্মান ও নাগরিকত্ব দিয়ে দ্রুত স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’
শুধু উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে নয়, এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪০টি আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের একটিই দাবি- অধিকার, সম্মান ও নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া।
উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নুরুল করিম বলেন, ‘আমাদের শরণার্থী জীবন ভালো লাগে না। আমরা দ্রুত নিজ দেশে ফিরতে চাই, ভালভাবে বাঁচাতে চাই।’
বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নুর হোসেন বলেন, ‘এত বছর ধরে শরণার্থী জীবন যাপন করছি। তার একমাত্র কারণ অধিকার, সম্মান ও নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশে ফেরার জন্য। বিশ্ববাসী মিয়ানমারকে দ্রুত চাপ দিক যাতে মিয়ানমার আমাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।’
বছরের পর বছর অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয়রা। তাই করোনা মহামারিকে পুঁজি করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত না করতে মিয়ানমারকে বিশ্ববাসীর চাপ অব্যাহত রাখার দাবি তাদের।
উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা নুর আহমদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে দ্রুত ফেরত পাঠিয়ে উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয় জনগণকে বাঁচানোর দাবি জানাচ্ছি।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এই করোনা পরিস্থিতির মাঝেও মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের আলোচনা অব্যাহত থাকুক। এটা চলমান রাখা উচিত। কারণ, মিয়ানমার যাতে বার বার সুযোগ না পায়। বাংলাদেশে অবস্থানরত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে মিয়ারমারের যে অনীহা, এটা তারা যাতে প্রকাশ করতে না পারে।’
বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করে মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনাকে পুঁজি করে মিয়ানমার যাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত না করে। করোনার এই সময়েও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যতটুকু সম্ভব এগিয়ে নেয়া যায় তার জন্য সকলের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’
এব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তো সরকারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। এটা সরকার নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সরকারের যেদিন সিদ্ধান্ত হবে সেদিনই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। যার জন্য আমরা সবসময়ই প্রস্তুত। প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের দেখভাল করা।’
মো. মাহবুব আলম তালুকদার আরও বলেন, ‘করোনার কারণে পুরো বিশ্ব এখন স্থবির। সুতরাং করোনার কারণে প্রত্যাবাসন যে বাধাগ্রস্ত সেটা বলবো না, এটা চলমান রয়েছে। আর বিশ্ব শরণার্থী দিবসে উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের সকল অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। সবার সাথে আলোচনা করেই করোনা পরিস্থিতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’