২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় সংবলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ৯ হাজার ১৩০ কোটি টাকার এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী ও এনইসির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন। সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষ থেকেই এনইসির বেশ কয়েকজন সদস্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে সভায় যোগ দেন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এডিপি অনুমোদন হয়েছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই এই অনুমোদন। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরেও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার, কভিড-১৯ মোকাবিলা, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সভায় পরিকল্পনামন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মেটানো হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা করপোরেশনের ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা সরবরাহ করবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় মোট প্রকল্প ১ হাজার ৪৩৫টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৪৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প ৮৫টি।
সরবরাহের মতোই পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ খাতে ৭০ হাজার ৬৯৬ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ৪১২, শিক্ষায় ২৯ হাজার ৮১ কোটি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে ২৪ হাজার ৪৯৭ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে ১৯ হাজার ২৭৮, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৬৫, কৃষি খাতে ১০ হাজার ১৪৪, পরিবেশ, জলবায়ু, পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৯৫, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৪০৭ এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়।
এছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। এর পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৩১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগে ২৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রায় ১৬ হাজার ১১ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে প্রায় ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্রায় ১৪ হাজার ১২৯ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে প্রায় ১৪ হাজার ১ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় ১১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ২৯০, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৭ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে