রাজনীতিতে কোনো উত্তাপ নেই। কোনো আন্দোলন নেই। এর মধ্যেই হঠাৎ করে রাজধানীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আগুন আতঙ্ক। বৃহস্পতিবার পাঁচঘণ্টার মধ্যে যাত্রীবাহী নয়টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাৎক্ষণিকভাবে তখন জানা যায়নি কারা দিয়েছে আগুন। অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল সকালে নয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহার নামীয় আসামি ৪৪৬ জন। এতে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের প্রায় সবাই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
ইতিমধ্যে একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী এবং অন্য এক নারী নেত্রীর ফোনালাপটিও প্রকৃতপক্ষে তাদের কিনা এবং অডিওটি গত বৃহস্পতিবারের নাকি আরো আগের এসব বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। তাছাড়া সম্প্রতি বাসের রুট পরিবর্তনসহ ২২টি কোম্পানির অধীনে ঢাকা সিটির যাত্রীবাহী বাস চলাচলের সিদ্ধান্তের কারণে বিক্ষুব্ধ কোনো পক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না তাও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় দু’টি মামলা, শাহবাগ থানায় দু’টি, পল্টন থানায় দু’টি, বংশাল থানায় একটি, ভাটারা থানায় একটি ও কলাবাগান থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, শেখ রবিউল আলম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুু, সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করীব বাদরু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আল মেহেদী হাসানসহ ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে বাস পোড়ানোর মামলায়।
এছাড়াও আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহমেদ মিলন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল, সাব্বির আহমেদ দিপু, সাবেক কাউন্সিলর খাজা হাবিব, শাহবাগ থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মুকুল মুন্সী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এসএম জিলানী, সহ-সভাপতি এমদাদুল হক এমদাদ, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বংশাল থানা যুবদলের সহ-সভাপতি ফারুক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন, ছাত্রদলের বংশাল থানার সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ প্রমুখ। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাগুলো করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এসব মামলা করা হয়। এসব মামলায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ২১ জনকে। আসামিদের মধ্যে মতিঝিল থানায় একজন, শাহবাগে ছয় জন, পল্টনে নয়জন, বংশালে দুইজন ও কলাবাগানে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসআই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ১টা ৩৫ মিনিটে বেতার মাধ্যমে সংবাদ পান যে, আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর দুষ্কৃতিকারীরা দেওয়ান পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিসকে জানিয়ে ফোর্স নিয়ে ১টা ৪০ মিনিটে ঘটনাস্থলে যান এসআই জাহাঙ্গীর। ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসটি পুড়তে দেখেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম হযরত আলী। তিনি ঢাকা দক্ষিণের ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি।
একইভাবে মতিঝিল থানার মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসহ ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীগণ ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনকে বানচাল করার লক্ষ্যে নাশকতা ও মানুষ হত্যার উদ্দেশে ৮৬/৮৭ মতিঝিলের জোয়ার সাহারা বাস ডিপো রূপায়ণ হাউজিং প্রজেক্টের সামনে পাকা রাস্তার ওপরে থাকা বিআরটিসি দ্বিতল যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দিলে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। চালক, স্টাফ ও যাত্রীগণ গাড়ি থেকে বের হয়ে প্রাণে বেঁচে যান। তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত লোকজন আগুন নেভাতে চেষ্টা করে। খবর পেয়ে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে আসামিরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এসব বিষয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি’র প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, যেহেতু আগুন দেয়ার সময় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি তাই কারা আগুন দিয়েছে তা তদন্ত করে জানা যাবে। তবে বিএনপি, ছাত্রদল গতকাল বসুন্ধরা এলাকায় মিছিল করেছে। এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুর করে। তখন দু’জনকে আটক করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও নয়াপল্টন এলাকাতেও মিছিল করেছে তারা। এরপরই মূলত আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। তাই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে একে একে নয়টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যেসব বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সর্বোচ্চ ১২-১৪ জন যাত্রী ছিল। তবে কারা অগ্নিসংযোগ করেছে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।