মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিসহ সব ‘অন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ রুখে দেওয়ার ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার মিরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলটির নেতারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নানামুখী ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেন।
এদিন সকালে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমরা যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক সেই সময় বাঙালির মেধা ও বিবেক হিসেবে খ্যাত বুদ্ধিজীবীদের, বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দিতে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, সেদিন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যেভাবে পরাজিত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে, বাঙালির কাছে। তাদের আন্তর্জাতিক যে াপ্রভু রয়েছে তারাও সেদিন পরাজিত হয়েছিল।
নানক আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও একাত্তরের পরাজিত শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আজকেও যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে এই বাঙালি জাতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে। এই হল বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রত্যয়।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা। এসব বুদ্ধিজীবীর চেতনাকে সর্বস্তরের দিতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, শুধু ঢাকায় নয়, জেলায় জেলায় বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা করা হয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানেরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে, তারা আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আর যে সকল দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার আসামিরা রয়েছে, সেসব দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও রয়েছে।
তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছ।
রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি, বিভিন্ন সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং তারা এখনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সুতরাং পরিপূর্ণভাবে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই বাংলাদেশ থেকে আমরা তাদেরকে পরিপূর্ণভাবে নির্মূল করতে পারব।
মেয়র বলেন, যারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে সে সকল রাজাকার, আলবদর, আলশামস এখনও সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে আছে। সুতরাং এই বিচার কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ সম্পন্ন হয়নি। যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনাটাই এখন জাতির দাবি।
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবু-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, আনিসুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনে মাঠে নামে।
রাতের অন্ধকারে বাসা কিংবা কর্মস্থল থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে তারা শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করা। দেশের নানা জায়গায় হত্যাযজ্ঞ চললেও মূল হত্যাযজ্ঞ চলে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে।
সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে।