সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল – ছবি : সংগৃহীত
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বিদায় সংবর্ধনা বর্জন করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
প্রধান বিচারপতির বিদায় অনুষ্ঠানে আইনজীবীদের অবজ্ঞা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ এনে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বিক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে আইনজীবী সমিতির ৩ নম্বর হলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্যানেল থেকে নির্বাচিত বার সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
লিখিত বক্তব্যে বার সম্পাদক বলেন, ‘রেওয়াজ অনুযায়ী কোনো প্রধান বিচারপতির বিদায় অনুষ্ঠানের কমপক্ষে ৩/৪ দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও সদস্যদের অংশগ্রহণ বিষয়ে সমিতির সভাপতি/সম্পাদককে অবহিত করা হয়ে থাকে। একইসাথে সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রধান বিচারপতির জীবনবৃত্তান্ত প্রেরণ করা হয়।
সমিতির পক্ষ থেকেও সদস্যদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে অবহিত করে তাদের যোগদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু গতকাল প্রধান বিচারপতির বিদায় অনুষ্ঠান বিষয়ে সমিতিকে অবহিত করা হয়নি। এটি সমিতির প্রতিটি সদস্যের জন্য চরম অবজ্ঞার শামিল।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে এসএমএসের মাধ্যমে আজকের সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে সাংবাদিক ও সমিতির সদস্যদের অবহিত করা হয়। এসএমএস দেয়ার পর রেজিস্ট্রার জেনারেল সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে সম্পাদককে ফোন করে আজ (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে বলে অবহিত করেন। কিন্তু আমাদের করণীয় কি বা সদস্যদের আমন্ত্রণের বিষয়ে কিছু বলেননি।
গত ১৪ এপ্রিল বারের সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল মতিন খসরু। তার মৃত্যুর পর থেকে সমিতির সভাপতি পদ শূন্য রয়েছে। সভাপতির অবর্তমানে সমিতির দুজন সহ-সভাপতিকে দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তারা হচ্ছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: জালাল উদ্দিন ও সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শফিক উল্লাহ। যেকোনো অনুষ্ঠানে সভাপতির অবর্তমানে সিনিয়র সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন এটিই সাংবিধানিক রীতি।
তবে ক্রমাগতভাবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বর্তমান সভাপতি হিসেবে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। এমনকি আগামী ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সুপ্রিম কোর্ট দিবসের আমন্ত্রণপত্রেও অ্যাটর্নি জেনারেলকে সমিতির সভাপতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং সমিতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার অপপ্রয়াস
তিনি বলেন, ‘আজকের বিদায় অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রধান বিচারপতির কার্যকালে তার সফলতা-ব্যর্থতা, সমিতির সদস্যদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি বিষয়ে আমরা আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপ্রার্থী মানুষের দুর্দশা, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম, হাইকোর্ট প্রদত্ত জামিনাদেশ ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের অহরহ স্থগিতাদেশের কারণে সৃষ্ট মামলা জট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি, সমিতির অভ্যন্তরে স্থাপিত সুপ্রিম কোর্টের স্টাফদের জন্য অস্থায়ী টিনশেড উচ্ছেদ, সমিতির নির্মাণাধীন ভবন-২০২০ এর ওপর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সমিতির সদস্যদের পেশাগত মানোন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সংবর্ধনায় বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আওয়ামী প্যানেল থেকে নির্বাচিত সহ-সভাপতি মুহা. শফিক উল্লাহ। শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিদায়ী বক্তব্য রাখেন।