নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সোমবার বিকাল চারটায় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ সংলাপ শুরু করবেন তিনি। ইতোমধ্যে আমন্ত্রণের চিঠি পেয়েছে দলটি।
এদিকে এখনো আমন্ত্রণের চিঠি পায়নি মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। চিঠি পাওয়ার পর এ ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
বিএনপির অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র দলগুলো সংলাপে অংশ নিতে আগ্রহী।
ইসি গঠনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মতো মো. আবদুল হামিদও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল এখন ৩৯টি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এক মাস ধরে ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। তবে এবারও ৩১টি দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেক্ষেত্রে একাধিক দল নিয়ে একই দিনে সংলাপ করতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছি। সরকারের একাধিক মন্ত্রীও আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। তারপরও মহামান্য রাষ্ট্রপতি অতীতের মতো এবারও ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন। তাতে আপত্তি নেই। আমরা ইতোমধ্যে আমন্ত্রণের চিঠি পেয়েছি। সোমবার বিকাল চারটায় আমাদের সঙ্গে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ হবে। সেখানে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।
জানা গেছে, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি শুক্রবার পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক চিঠি পায়নি। চিঠি পাওয়ার পর দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে দলের একাধিক নীতিনির্ধারকের নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে এবার রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে দলীয় ফোরামে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। সেখানে বেশির ভাগ নেতাই সংলাপে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। সবার মতামতের পর সংলাপে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড।
সংলাপে না যাওয়ার যুক্তি তুলে ধরে স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ লোকদেখানো ও সংবিধানবিরোধী। এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই এসব সংলাপে অংশ নিয়ে এর গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো মানে নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপ নিয়ে আমরা এখনো কোনো আলোচনা করিনি। তাছাড়া আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও এখনো পাইনি। পেলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, অতীতে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এমন সংলাপ করেছেন। এরপর সার্চ কমিটিও করেছেন। কিন্তু এসবের ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যায়নি। সংলাপ ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে কমিশন গঠন করা হয়েছিল তারা পুরোপুরি সরকারের আজ্ঞাবহ ছিলেন। তাদের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়নি। তাই ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপের প্রতি মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। তারা (জনগণ) মনে করছেন সংলাপসহ যা কিছুই হোক শেষ পর্যন্ত সরকারের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিছুই করা সম্ভব হবে না।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আমরা নতুন ইসি গঠনকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। এটা না হলে কোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষেই অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। তাই দেশবাসীর একমাত্র দাবি হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ না থাকলেও পুরো বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপির হাইকামান্ড। জোট বা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও করছেন দলটির নেতারা। তাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করছেন। নিজেদের পাশাপাশি ওইসব দলও যাতে সংলাপে না যায় সে ব্যাপারে কথাবার্তা বলছেন।
রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সুশীল সমাজ বিশেষ করে যারা নির্বাচন নিয়ে কাজ করেন তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারা। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের ব্যাপারে তাদের পরামর্শও নেওয়া হচ্ছে। নতুন ইসি গঠনে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর যাতে চাপ প্রয়োগ করা হয় তা নিয়েও কাজ করছেন দলটির নেতারা।
দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, শেষ মুহূর্তে সংলাপে না গেলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি চিঠি পাঠানোর চিন্তা রয়েছে। সংলাপে অংশ না নেওয়ার কারণসহ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতে তুলে ধরা হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিসহ দেশের সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতিকে সংলাপের অনুরোধ জানানো হতে পারে সেই চিঠিতে।
সংলাপের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। সংলাপ শেষে সার্চ কমিটি গঠন করার পর সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই কমিটির কাজের সাচিবিক দায়িত্বও থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হাতে।