রাজধানীর উপকণ্ঠে নতুন শহর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। প্রথম দিনই মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এখনো প্রস্তুত হয়নি মেলার বেশির ভাগ স্টল ও প্যাভিলিয়ন। চলছে নির্মাণ আর গোছানোর কাজ।
শনিবার (১ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারই প্রথম স্থায়ী ভেন্যুতে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগে এই মেলা হতো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে।
উদ্বোধনের পর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য মেলা খুলে দেওয়া হয়। বিকেলে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম দিনই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। যেসব স্টল-প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত হয়েছে সেখানে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন পণ্য দেখছেন, দরদাম করছেন, আবার অনেকে কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন
তবে মেলায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়ন এখনও প্রস্তুত হয়নি। স্টলের নির্মাণকাজ চলছে। আবার অনেক স্টলে পণ্য গোছানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের। তাই মেলা পুরোপুরি জমে উঠতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্টলের কাজে ব্যস্ত কালাম নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, শাড়ি ও থ্রিপিসের স্টল। গত দুই দিন ধরে কাজ করছি। পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে।
এদিকে উদ্বোধনের পরও মেলা প্রস্তুত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা দর্শনার্থীরা।
মেলায় আসা নাজমুল হোসেন নামে এক দর্শনার্থী জানান, মেলা শুরু হয়েছে তাই ঘুরতে এসেছি। কিন্তু মেলায় অধিকাংশ স্টল এখনও নির্মাণ করা হয়নি। বাড্ডা থেকে মোটরসাইকেলে এসেছি। ৩০০ ফিটের রাস্তার কাজ চলছে অনেক জায়গায় রাস্তা ভাঙা, ধুলাবালিতে খুব বাজে অবস্থা। তারপরও এখানে এসে ভালো লাগতো যদি পরিপূর্ণ প্রস্তুত দেখতে পারতাম।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। এখানে অনেক বিদেশি ক্রেতা ও দর্শনার্থীরাও আসবে। তারা যদি এ রকম অব্যবস্থাপনা দেখেন তাহলে তো এটা আমাদের জন্য লজ্জার। তাই এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
আগেও আগারগাঁওয়ে অস্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণে অব্যবস্থাপনা ছিল। মেলা শুরুর প্রথম দশ দিন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুত হতেই চলে যায়; এবার স্থায়ী ভেন্যুতেও একই অবস্থা।
এর আগে শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বাণিজ্যমেলা উপলক্ষে মেলার এক্সিবিশন সেন্টারে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, গত বছর কোভিড মহামারির কারণে মেলার আয়োজন করা সম্ভব না হলেও এখন প্রথমবারের মতো স্থায়ী ভেন্যু বিবিসিএফইসিতে বাণিজ্যমেলা হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সামনে রেখে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ হয়েছে। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে (সম্মুখ ও পেছনে) প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এবারের মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্ট গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি।
সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা ও শিশুদের ২০ টাকা।
মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে প্রতিদিন ৩০টি বিআরটিসি বাস ও অন্যান্য যাত্রীবাহী বাস চলাচল করবে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা। নামতে হবে কাঞ্চন ব্রিজে। সেখান থেকে ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে যেতে হবে।