২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ১:৪০
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ১:৪০

মিরাজ-শান্ত-জয়ে নিউজিল্যান্ডে দুর্দান্ত দিন বাংলাদেশের

বলা হয়ে থাকে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন মানে সফরকারীদের জন্য দুর্গম কোনও কিছু। সেই জায়গায় নতুন বছরে টানা দুই দিন নিজেদের আধিপত্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। দারুণ বোলিংয়ে কিউইদের ৩২৮ রানে আটকে দেওয়ার পর ব্যাট হাতেও অপ্রতিরোধ্য অবস্থায় বাংলাদেশ। তাতে নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন শেষে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মুমিনুলদের ভাবমূর্তি! প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে করেছে ১৭৫ রান।    

নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে বাংলাদেশের ব্যাটারদের পরীক্ষা দিতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের পারফরম্যান্সও যাচ্ছেতাই। তাই দেখার ছিল, অতীতের হতাশা ভেঙে নতুন বছরে ব্যাটাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কিনা। গত কয়েক সিরিজের সঙ্গে তুলনা টানলে মন্দ হয়নি বাংলাদেশের শুরু। বরং সলিড ব্যাটিংয়ের অন্যতম প্রদর্শনী করেছেন দুই তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। দু’জনেই হাফসেঞ্চুরি তুলে নিতে পেরেছেন।

শুরুতে দুই ওপেনার সাদমান ও জয় মিলে এগিয়ে নিচ্ছিলেন স্কোরবোর্ড। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি সাদমান। নিল ওয়াগনারকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এই ওপেনার। তাতে ৪৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় সফরকারীরা। ফেরার আগে ৫৫ বলে এক বাউন্ডারিতে ২২ রান করেন সাদমান।

তার পরেই সলিড ব্যাটিংয়ে কিউই বোলারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়েছেন শান্ত ও জয়। শান্ত তো ছয় মেরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন। তার পর জয় তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। দু’জনের প্রতিরাধে এই জুটিতে যোগ হয় ১০৪ রান। একটা সময়  তাদের অবিচল মনে হলেও দারুণ এই জুটি ভেঙে দেন ওয়াগনার। ফুল লেংথের বলে শান্তকে ক্যাচ বানান ইয়াংয়ের। ১০৯ বল খেলা শান্ত কোনও ফুটওয়ার্ক করেননি। তার ৬৪ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ১টি ছয়। 

তবে জয়ের বেলাতেও ভাগ্য সহায় ছিল বলা যায়। ২০ রানে থাকা অবস্থায় এলবিডাব্লিউর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। নিউজিল্যান্ড রিভিউ নেয়নি। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে, রিভউ নিলে নির্ঘাত সাজঘরে ফিরতে হতো তাকে। সেটি না হওয়ায় পুরোপুরি টেস্ট ব্যাটিংয়ের অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ব্যাটার। 

অবশ্য নিউজিল্যান্ডে তার অতীত ইতিহাসও বলে এখানকার কন্ডিশনে তিনি কতটা সফল। প্রস্তুতি ম্যাচে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ২০২০ সালে এই নিউজিল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সেমিতে বিদায় দেন কিউইদের। তার পর বাকিটা ইতিহাস।

অবশ্য রাহুল দ্রাবিড় আর সাকিব আল হাসানকে আদর্শ মেনে চলা এই ব্যাটারের একটাই চাওয়া ছিল- ২২ গজে দ্য ওয়াল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। ২১১ বল খেলে ৭০ রানে অপরাজিত থাকা তারই ইঙ্গিত। মুমিনুল অপরাজিত আছেন ৮ রানে।

এর আগে ৫ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা কিউইরা প্রথম ইনিংসে ১০৮.১ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ৩২৮ রানে। ৭০ রান যোগ করতে শেষ ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। যার মধ্যে টানা তিনটিই ছিল মিরাজের শিকার। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার শরিফুল। বাঁহাতি পেসার ২৬ ওভারে ৬৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। মিরাজও পেয়েছেন ৩ উইকেট, ৩২ ওভারে তার খরচ ৮৬ রান। অন্যদিকে পার্টটাইম বোলার মুমিনুলও সাফল্যের সাগরে ভেসেছেন। ৪.১ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন কনওয়ে ও নিকোলসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দুটি। এবাদত হোসেন পেয়েছেন ১ উইকেট।

নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান এসেছে ডেভন কনওয়ের ব্যাট থেকে। প্রথম দিনেই সেঞ্চুরি পাওয়া কনওয়ে খেলেন ১২২ রানের ইনিংস। ৭৫ রান এসেছে হেনরি নিকোলসের ব্যাট থেকে। হাফসেঞ্চুরি করেছেন উইল ইয়ংও (৫২)।

দিনের বাকি সময় দলকে আর বিপদে বাড়তে দেননি জয়। অধিনায়ক মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে ২৮ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন বাকি দিনটা। দ্বিতীয় দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৭৫ রান। যেখানে প্রথম ইনিংসে কিউইদের থেকে এখনো ১৫৩ রানে পিছিয়ে টাইগাররা। হাতে ৮ উইকেট। আগামীকাল ম্যাচের তৃতীয় দিন মাহমুদুল হাসান জয় ৭০ এবং মুমিনুল হক ৮ রান নিয়ে আবার ব্যাটিং শুরু করবেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৭৫/২ (৬৭ ওভার)

ব্যাটিং: জয় ২১১ বলে ৭০*, মুমিনুল ২৭ বলে ৮ রান*, শান্ত ১০৯ বলে ৬৪ রান; নেইল ওয়েগনার (১৬-৫-২৭-২)

Facebook
Twitter
LinkedIn