টেস্টের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের র্যাঙ্কিংয়ের ব্যবধান ঢের। কিউই দুর্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে খেলা ৯ ম্যাচের কোনোটিতেই হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। এবারের সফরে অবশ্য দেখা মিলেছে ভিন্ন এক বাংলাদেশের। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে আগের দুদিনের দাপট ধরে রেখেছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর স্বাগতিকদের বিপক্ষে লিড নিয়েছে মুমিনুল হকের দল।
এই প্রতিবেদন লেখার তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৪৮ রান। এতে নিউজিল্যান্ডের করা প্রথম ইনিংসের ৩২৮ রান টপকে ২০ রানের লিড নিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই লিড আরও বাড়িয়ে নিতে মুমিনুল ৮২ এবং লিটন কুমার দাস ৭০ রানে ব্যাট করছেন।
কয়েকবার জীবন পাওয়া মুমিনুল শেষ পর্যন্ত ধীর লয়ে ব্যাট চালিয়েছেন। ১৫তম হাফসেঞ্চুরি তুলে ব্যাট করছেন ৭৫ রানে। সঙ্গী লিটন টেস্ট ফর্মের ধারাবাহিকতা টেনে এনেছেন নিউজিল্যান্ডেও। পাকিস্তান সিরিজের পর লম্বা ইনিংস খেলার পথে তুলে নিয়েছেন ১১তম ফিফটি। যা নিউজিল্যান্ডে লিটনের প্রথম। ক্রিজে আছেন ৬৭ রানে। দু’জনের প্রতিরোধে কিউই পেসাররা কোনও সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। বরং শাসন করে ১২৯ যোগ করেছে এই জুটি।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম সেশনে সতর্ক থেকে ব্যাট করা বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে যোগ করতে পেরেছে ৪৫ রান। বলা যাবে না বাংলাদেশ পুরো সেশন স্বস্তিতে খেলেছে। বরং নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। ভাগ্যের ছোঁয়া না থাকলে উইকেট আরও একটি পড়তে পারতো।
অথচ দ্বিতীয় দিন আলো ছড়িয়েছিলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। তার দারুণ ব্যাটিং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশাও বাড়িয়ে দেয় অনেক। কিন্তু তৃতীয় দিন নড়বড়ে ব্যাটিংয়ের মাশুল দেন শেষ পর্যন্ত। অফস্টাম্পের বাইরের বল অযথা খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন গালিতে। তাতে দিনের শুরুতেই তার উইকেট পতনে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে জয় মাঠে নেমেছিলেন আগের দিনের ৭০ রান নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল। নিল ওয়াগনারের বাইরের বলটা ছেড়ে দিলেও হতো। কিন্তু ফুট ওয়ার্ক না করে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন জয়। ক্যাচ নিয়ে নেন হেনরি নিকোলস। তাতে ২২৮ বলে ৭৮ রানেই শেষ হয় জয়ের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। তার পর মুমিনুলও ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কাইল জেমিসনকে। কিন্তু কিউই পেসার তা হাতে জমাতে পারেননি।
নতুন বল নেওয়ার আগের ওভারে তো ভাগ্যের পরশে বেঁচে যান মুমিনুল! আবারও নিল ওয়াগনারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু থার্ড আম্পায়ার পায়ের নো বল দেওয়ায় জীবন পান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তার পর অবশ্য মুশফিক-মুমিনুল মিলে সতর্ক থেকেই পার করার চেষ্টা করেন কিছুটা সময়। কিন্তু মনোযোগ ধরে রাখতে না পারায় থিতু হতে পারেননি মুশফিক। লাঞ্চ ব্রেকের তখন ২০ মিনিট বাকি। বোল্টের ফুলার লেন্থের বল বুঝতেই পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটার। ভুল লাইন ধরে খেলতে গিয়ে মুশফিক বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ১২ রানে। তার ৫৩ রানের ইনিংসে ছিল একটি চার।
গতকাল দুই ওপেনার সাদমান ও জয় মিলে এগিয়ে নিচ্ছিলেন স্কোরবোর্ড। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি সাদমান। নিল ওয়াগনারকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এই ওপেনার। তাতে ৪৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় সফরকারীরা। ফেরার আগে ৫৫ বলে এক বাউন্ডারিতে ২২ রান করেন সাদমান।
তার পরেই দারুণ ব্যাটিংয়ে কিউই বোলারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়েছেন শান্ত ও জয়। দু’জনের প্রতিরাধে এই জুটিতে যোগ হয় ১০৪ রান। পরে এই জুটি ভেঙে দেন ওয়াগনার। ফুল লেংথের বলে শান্তকে ক্যাচ বানান ইয়াংয়ের। শান্তর ৬৪ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ১টি ছয়। গতকালকের মূল প্রতিরোধটাই এই দু’জন।
এর আগে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১০৮.১ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ৩২৮ রানে। ৭০ রান যোগ করতে শেষ ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। যার মধ্যে টানা তিনটিই ছিল মিরাজের শিকার। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার শরিফুল। বাঁহাতি পেসার ২৬ ওভারে ৬৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। মিরাজও পেয়েছেন ৩ উইকেট, ৩২ ওভারে তার খরচ ৮৬ রান। অন্যদিকে পার্টটাইম বোলার মুমিনুলও সাফল্যের সাগরে ভেসেছেন। ৪.১ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন কনওয়ে ও নিকোলসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দুটি। এবাদত হোসেন পেয়েছেন ১ উইকেট।
আগের সেশনে জোড়া ফিফটি তুলে নেওয়া মুমিনুল ৬১ ও লিটন ৫১ রান নিয়ে দিনের শেষ সেশনের খেলা শুরু করেন। তখন ব্ল্যাকক্যাপদের থেকে প্রথম ইনিংসে ২১ রানে পিছিয়ে ছিল টাইগাররা। ব্যাট করতে নেমে দ্রুতই সেই রান শোধ করে লিড নিয়েছে বাংলাদেশ দল।
সকালের মন্থর ব্যাটিংয়ের চিত্র পাল্টে দ্বিতীয় সেশনে রান উৎসব হয়েছে। প্রথম সেশনে ২৬ ওভারে মাত্র ৪৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলেছে ৮৭ রান। ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে তৃতীয় সেশনেও। বলা চলে টেস্টের নাটাই এখন বাংলাদেশের হাতে। লিটন-মুশফিক দুজনেই ছুটছেন সেঞ্চুরির দিকে।