২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ১:৪৪
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ১:৪৪

নিজের জীবনের আলোর বিনিময়ে, সবার ঘরে আলো দিয়ে গেল- সোহেল রানা

পল্লীবিদ্যুতের চরম গাফিলতি, কে নেবে এমন মৃত্যুর দায়ভার?

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও বিদ্যুৎ লাইনে কাজ করত সোহেল রানা। ২৩ বছরের টগবগে যুবক। গত ১১ তারিখ শেষ বিকেলেটা ছিল ওর জীবনের শেষ বিকেল! পল্লীবিদ্যুতের কাজ করা কালীন কারেন্টের মেইন লাইনে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে তাৎক্ষণিক মৃতু্যবরণ করে। যা ছিল সবার চোখে দেখা এক করুণ মৃত্যু। মোগরাপাড়া সি এন জি পাম্পের কাছের উচ্চভোল্টেজ এর ট্রান্সমিটারের সাথে ঝুলে ছিল সোহেলের নিথর মৃতদেহ। কতটা কষ্ট পেয়ে ছেলেটা চলে গেছে, তারই পরিচিত এক দোকানীর ভাষ্যঃ মারা যাবার পর সোহেলের নাক মুখ থেকে কালো ধুঁয়া নির্গত হতে দেখা গেছে। সেখানকার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে পরে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে অফিসিয়ালি প্রথম জানাজা দিয়ে, নিজ বাসভবন কুমিল্লার মুরাদনগরের কদমতলীতে নেয়া হয়। এই তরুণের অকাল প্রয়াণে এলাকায় নেমে আসে এক শোকের ছায়া। যা ছিল বড়ই হ্রদয়বিদারক এক মুহূর্ত। সেখানে বাদ মাগরিব শেষ জানাজার মাধ্যমে হতভাগা যুবকের দাফন সম্পুন্ন হয়। সোহেল কিছুদিন আগেও ছুটিতে এলাকায় এসে বন্ধুদের বলে গেছে, তার পরিবার কিছু ঋণের সমস্যায় আছে। বাড়ির ধার দেনা শোধ করতেই তার শহরে আসা। এবং জীবনের ঝুঁকি জেনেও পল্লীবিদ্যুতের লাইনম্যান পদে কাজ নেয়া। চাকরির পর তার জন্য মেয়ে খোঁজাও শুরু করেছিল তার বড় বোনেরা। তার অনাগত ভবিষ্যৎ যেন তাকে প্রতারিত করল! প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়; সোহেল মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় বিদ্যুতের লাইন মেরামত করছিল। হঠাৎ মূল লাইন থেকে সংযোগ চলে আসলে তার ‘স্পট ডেথ’ ঘটে। সাথে সাথে পুরো এলাকায় জানাজানি হয়। তাড়খাম্বার অনেক উঁচুতে সোহেলের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে শতশত মানুষ এসে আহাজারি করতে থাকে। অনেকে জানায়; সোহেল খুব হাসিখুশি একটা ছেলে। যখনই যেই লাইনে সমস্যা শুনেছে, কাজে অবহেলা করেনি। চাকরির প্রায় তিন বছর ধরেই সাহসী এই যুবক, কখনও জীবনের ভয় করেনি। উঠে যেত মই বেয়ে। শেষ কাজেও তার কাজে কোন গাফিলতি ছিল না। কিন্তু গাফিলতি ছিল তার কর্মস্থল ও অফিসার, সব সহকর্মীদের ভেতর। প্রত্যক্ষ জনৈক যুবক তো সংবাদ মাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছে; সোহেল নাকি নিচে থাকা ওয়ারলেস অফিসারকে বলেছে, স্যার আমি কাজ শেষ করে নিচে আসলে মেইন লাইনে কথা বলবেন….আর এটা বলবেই বা কেন? অফিসারের চোখ, বুদ্ধি, বিবেক ও মানবতা বিষয়ে কি কোন নীতিশিক্ষা ছিল না? সোহেল কাজ করা অবস্থায় কি করে মেইন লাইন থেকে কানেকশন চলে আসল। এটা খতিয়ে দেখার বিষয়? অনেকে বলছেন, এর আগেও পল্লীবিদ্যুতের লোকজনের অবহেলায় আরও কয়েকটি এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে এলাকায়। সোহেল রানার এই মৃত্যুর দায় এড়ানো মানে, অযোগ্য লোকজনকে আঁড়াল করা। বিদুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর হওয়া উচিত। সবাইকে আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে এমন মরনবাহী বিপদজনক চাকরিতে নিয়োগ দেয়া উচিত। সড়কের কোথায় কি কাজ হচ্ছে, কোন লাইনম্যান কোন অবস্থায় কাজ করছে সেই দৃশ্য মেইন লাইন অপারেটিং সিস্টেমে অন্তভুর্ক্তিরও সুপারিশ করছে সবাই। তরুণ সোহেল রানার মৃত্যু শোক হোক বাকী সব লাইনম্যানদের জীবনের ঝুঁকিমুক্ত কাজের প্রেরণা। দেশের বিদ্যুৎ মহার্ঘ সমীপে সোহেলের পুত্রহারা পিতা মোঃ নজরুল ইসলামেরও এটুকুই মিনতি…

অভিযোগ নিউজ বিডি ২৪ | OVIJOG NEWS BD 24

মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি।

ছবিঃ আদর এহসান

Facebook
Twitter
LinkedIn