২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৯:৩৯
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / রাত ৯:৩৯

বিদ্যুত মূল্য ৬৯% বৃদ্ধির প্রস্তাব পিডিবির

গ্যাস সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় গত অর্থবছর রেকর্ড লোকসান গুনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চলতি অর্থবছরও বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। এতে দেশেও বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে লোকসান আরও বৃদ্ধি পাবে। আর সে ঘাটতি পূরণে বাড়াতে হবে ভর্তুকি। এ চাপ কমাতে এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। এতে তিন ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রথম প্রস্তাবে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার প্রায় ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে সরকার গ্যাসের দামও বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা পড়েছে। তা কার্যকর হলে বিদ্যুতের মূল্যহার আনুপাতিক হারে আরও বৃদ্ধির জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিমান্ড চার্জ আরোপ, ২০২৩-২০২৫ সালের জন্য ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ ট্যারিফ নির্ধারণ, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা ইত্যাদি বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য বরাদ্দকৃত এক হাজার ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় ফার্নেস অয়েল আমদানি বাড়াতে হয়েছে। তবে গত জুনে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এ বাবদ ব্যয় ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গত অর্থবছর শুধু জ্বালানি বাবদ ব্যয় আট হাজার ১৮০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছর প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে তিন টাকা ১৬ পয়সা। ২০১৯-২০ অর্থবছর এ ব্যয় ছিল ২ টাকা ১৩ পয়সা।

এদিকে জুলাইয়ে কয়লার ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব ধরনের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ও গ্যাস সরবরাহ আরও কমে যাওয়ায় চলতি (২০২২) বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিট জ্বালানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৪ টাকা ২৪ পয়সা। আর জ্বালানি বাবদ মোট ব্যয় বাড়বে ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। তবে এতে গ্যাসের সম্ভাব্য মূল্য বৃদ্ধি বিবেচনা করলে এ ব্যয় আরও বাড়বে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসি বিদ্যুতের গড় বাল্ক মূল্য নির্ধারণ করে পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। যদিও গত অর্থবছর গড় বাল্ক বিক্রয় মূল্য পাঁচ টাকা ১২ পয়সায় নেমে যায়। এতে পিডিবির বিদ্যুৎ বাল্ক বিক্রয় থেকে আয় হয় ৩৯ হাজার ৫২ কোটি টাকা। আর এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হয় ৫০ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। এতে সংস্থাটির লোকসান তথা ঘাটতি দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ১১ মাসের জন্য (জুলাই-মে) ভর্তুকি দিয়েছে ১০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ভর্তুকি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে পিডিবি।

চলতি বছর বিতরণকারী সংস্থা/কোম্পানিগুলোর কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির সম্ভাব্য পরিমাণ দাঁড়াবে আট হাজার ৮৯৯ কোটি ৩০ লাখ ইউনিট। গ্যাসের দাম না বাড়ালে এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হবে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। আর এ বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির আয় হবে ৪৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ পিডিবির বিদ্যুৎ কেনা ও বিক্রিতে ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে যথাক্রমে পাঁচ টাকা আট পয়সা ও আট টাকা ৫৮ পয়সা।

বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির ফলে চলতি বছর পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ইউনিটপ্রতি নির্ধারণ করতে হবে আট টাকা ৫৮ পয়সা। অর্থাৎ বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার সাড়ে তিন টাকা বা ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। আর বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহƒত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার চার টাকা ৪৫ পয়সা আছে। তবে সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে দুটি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসের দাম ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি করলে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি আরও ৫৬ পয়সা বাড়াতে হবে। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার পড়বে ৯ টাকা ১৪ পয়সা। আর গ্যাসের দাম ১২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করলে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে আরও ৬৯ পয়সা বাড়াতে হবে। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার পড়বে ৯ টাকা ২৭ পয়সা।

বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্যারিফ নির্ধারণে ডিমান্ড চার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছে পিডিবি। এছাড়া ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের জন্য ট্যারিফ ঘাটতি ও মূল্য বৃদ্ধির পৃথক প্রস্তাবও রয়েছে এতে। তা না হলে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিইআরসিকে মাল্টি-ইয়ার ট্যারিফ ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাপটিভ নিরুৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিইআরসিকে অনুরোধ করা হয়। এ ক্ষেত্রে শিল্প খাতে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দাম কম হারে বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn