চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে অনেক জায়গায় ভালো ফলাফল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৫৭টি ইউপিতে ভোট সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২ হাজার ১৩৫টি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১ হাজার ৬৯৫টিতে জয়লাভ করেছেন। নৌকার দখলে ৫৪ শতাংশ ইউপি।
অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ ইউপিতে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি-সমর্থিত ৩৫০ জন চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন। জাতীয় পার্টি-জাপা ৪১টি, জাতীয় পার্টি-জেপি আটটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থীরা সাতটি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ইউপির ফলাফল নানা কারণে আটকে আছে।
২০১৬ সালে প্রথম বার অনুষ্ঠিত দলীয় প্রতীকে ইউপির ভোটে আওয়ামী লীগ তুলনামূলক অনেক ভালো করেছিল। তৎকালীন ছয় ধাপে মোট ৪ হাজার ১০৪টি ইউপিতে ভোট হয়। সেই সময় ২ হাজার ৬৫২টি ইউপিতে নৌকা জয়লাভ করে; কিন্তু এবার ইতিমধ্যে প্রায় ৪ শতাধিক ইউপির জয় হাতছাড়া হয়ে গেছে দলটির।
ইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা প্রথম ধাপে ২৬৯, দ্বিতীয় ধাপে ৪৮৬, তৃতীয় ধাপে ৫২৫, চতুর্থ ধাপে ৩৯৭, পঞ্চম ধাপে ৩৪১ ও ষষ্ঠ ধাপে ১১৭টিতে জয় পায়। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রথম ধাপে ৮৮টি, দ্বিতীয় ধাপে ৩৩০, তৃতীয় ধাপে ৪৪৬, চতুর্থ ধাপে ৩৯০, পঞ্চম ধাপে ৩৪৬, ষষ্ঠ ধাপে ৯৫টিতে জয়ী হন। সর্বশেষ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ষষ্ঠ ধাপের ২১৮টি ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২১৬টি ইউপির ফলাফল ঘোষণা করেছে ইসি। এর মধ্যে ১১৭টি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। এছাড়াও জাতীয় পার্টি-জাপা তিনটি, জাতীয় পার্টি-জেপি একটি ইউপিতে জয়ী হয়েছে। এই ধাপে ইভিএমে অনুষ্ঠিত ভোটে রেকর্ডসংখ্যক ভোটার ভোটদান করেছেন।
গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউপির ভোট সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ৬৯২টি ইউপির ফলাফল আসে। ৪৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানসহ ৩৪১টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩৪৬টি ইউপিতে সরাসরি জয়লাভ করেছেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টি-জাপা দুইটি, জাতীয় পার্টি-জেপি একটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দুইটিতে জয়ী হয়।
গত ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ৮৩৪টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ৭৯৯টি ইউপির ফলাফল ঘোষণা করে ইসি। ইসির প্রাপ্ত ফলাফলে ঐ ধাপেও ভালো ফলাফল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যদিকে এই ধাপে তেমন বেশি সুবিধা করতে পারেননি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। চতুর্থ ধাপের ৪৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানসহ ৩৯৭টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। সরাসরি ভোটে জয়ী হয় ৩৪৯টি ইউপিতে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩৯২টি ইউপিতে সরাসরি জয়লাভ করেছেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টি-জাপা ছয়টি, জাতীয় পার্টি-জেপি একটি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দুইটি ও জাকের পার্টি একটিতে জয়ী হয়।
গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে সারা দেশে ১ হাজার ইউপিতে তৃতীয় ধাপে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোটের আগেই ১০০ ইউপিতে ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যায়। এর মধ্যে ৯৯ জনই আওয়ামী লীগের। ফলে ৯০০ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৪৫টি ইউপিতে জয়লাভ করেছেন। আওয়ামী লীগ জিতেছে ৫২৪ (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৯৯সহ) ইউপিতে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি-জাপা ১৭টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জমিয়তে উলামায়ে একটি করে ইউপিতে বিজয়ী হয়।
গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৮৩৪টি ইউপির মধ্যে ৪৮৬টিতে জয় পেয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। যার মধ্যে আবার ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান হন ৮১ জন। স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হন ৩৩০ জন। এই ধাপে দুই শতাধিক ইউপিতে জয় তুলে নেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে শতাধিক ইউপিতে জয় পান। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ১৮টি ইউপিতে জয়ী হন।
এর আগে গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপের দুই দফায় অনুষ্ঠিত ৩৬৪ ইউপির মধ্যে অধিকাংশ ইউপিতে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছিল। ইসি থেকে প্রাপ্ত ৩৫৭টি ইউপির ফলাফলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬৯টি এবং স্বতন্ত্র ৮৮টিতে জয়ী হয়।