জন্ম নিবন্ধন নিয়ে জনৈক মায়ের আক্ষেপমাখা সংলাপ ( সন্তান জন্ম দেয়ার চেয়েও সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ ওঠানো আরও বেশি কষ্টদায়ক….) এর প্রেক্ষাপটে বিশেষ প্রতিবেদনটি।
হঠাৎ করে সরকারিভাবে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে নেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। সন্তানের জন্ম সনদের সাথে বাবা মায়েরও জন্ম সনদ থাকা বাধ্যতামূলক! অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতেও কেন বাবা মাকে আবার জন্ম নিবন্ধন সনদ তুলতে হবে? এই সমিকরণে সিটি কর্পোরেশন আর নগরের অভিভাবক মহলের ভেতর শুরু হয়েছে এক মৌণ লড়াই!
স্কুল কলেজগুলোও হাতে নিয়েছে “ইউনিক আইডি” কার্যক্রম। তারা ছাত্র ছাত্রীকে সরবরাহ করছে একটি ফরম। আর এটা ফিলাপ করতে গেলেই দেখা যাচ্ছে বিপত্তি। যাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনে শো করছে না, তাদের পুনরায় নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সনদ তুলতে হবে? আর এটা করতে গিয়েই অভিভাবককে পড়তে হচ্ছে আরও কঠিন জটিলতায়। একেকজনকে দৌড়াতে হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন এর উত্তরে আর দক্ষিণে! সিটি. ক. আঞ্চলিক শাখাগুলোতে জনসেবা নিতে আসলে, সিটি. ক. কর্মীদের দাপুটে আচরণে অভিভাবক শ্রেণি বিরক্ত। এরা সবাইকে সঠিক উপায় বাতলে দিচ্ছে তো না’ই, সামনে টাঙানো একটা প্রিন্ট কাগজ ইশারায় দেখানো ছাড়া, তাদের যেন মুখ খোলা বারণ! সবাইকে পাঠিয়ে দিচ্ছে যার যার চেনা পরিচিত সব কম্পিটার কম্পোজের দোকানে! সরকারি লোকদের আন্তরিকতার শতভাগ অভাবের শিকার হয়ে, অভিভাবক মহল না বুঝে সিটি কর্পোরেশন এর আশে পাশে ঘুরঘুর করা আরও বাটপার দালালদের খপ্পড়ে পড়ে টাকা পয়সা নষ্ট করার সাথে, আরও মূল্যবান সময়ও অপচয় করছে। অনলাইন আবেদন করতে এসে যখনই শুনছে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন পড়ে, আগে আপনাদেরটা করতে হবে! পিতা মাতাকে আগে অনলাইনের আওতায় আনা হবে। তারপর ছেলে মেয়ে! এবার হলো? অভিভাবক মহল তো পাড়লে কেঁদে ফেলে শুনে? দৃশ্যটা মেয়র মহোদয়গণ না দেখলে আসলে বুঝবেন কি করে? সবারই প্রশ্ন- স্কুল কলেজে কি আমরা পড়ছি, না পড়ব? তাহলে যেসব স্কুল আর কলেজ বলছে ২ দিনের ভেতর, আর ১০ তারিখের ভেতর ছাত্রদের জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনে আনতে হবে। এসব হেডস্যার আর প্রিন্সিপাল মহোদয়গণকে যার যার কাছের সিটি কর্পোরেশন এর অফিসে গিয়ে যার যার ছাত্রের সনদ অনলাইনে আনার আগে তাদের অভিভাবকে গিয়ে আগে উদ্ধারের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে অভিভাবক মহল।
২০১২ এর আগে যারা জন্ম নিবন্ধন করেছে, তাদের বেশিরভাগই অনলাইনের আওতায় আসে না। সনদের এই নতুন নিয়মের সুযোগ নিচ্ছে দালাল ও কম্পিউটার কম্পোজের দোকান মালিক ও কর্মচারী। বেশি হলে ৫০ টাকার অনলাইন আবেদনে এরা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কেউ কেউ হয়ত আরও বেশিও তুলে নিচ্ছে। আবেদনের সাথে দাখিলকৃত কাগজপত্র নিয়েও অনেক হয়রানি চোখে পড়ছে। সন্তানের জন্ম সনদ দেখাতে গিয়ে সবাইকে এই কাগজ সেই কাগজ খুঁজে এনে শেষে যার যার কাউন্সিলরের কাছেও ছুটে যেতে হচ্ছে। আর কাউন্সিলরের দস্তখত আনতেও বের করতে হচ্ছে মাথার ঘাম পায়ে! এরপর শত জনতার লাইনে দাঁড়ানো? সে এক কেয়ামতের মাঠ! কে কার আগে দিবে? আসলে যার যার সন্তানের লেখাপড়ার চিন্তায় সবার যেন বেহুশ অবস্থা। এমনই একটি লাইন দেখলাম তিলপাপারা সিটি কর্পোরেশন এর আঞ্চলিক শাখায়। লোক আর ফরম জমা নেয়ার লোকের তুমুল তর্ক। বিষয় কী? খিলগাঁও চৌরাস্তা নিবাসী এক অভিভাবক বললেন, আমার ফরম জমা নিচ্ছে না। প্রথমে এই লোকই বলছে বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের কপি বর্তমান ঠিকানার হলেই হবে। এখন ৭০ জনের লাইন পেড়িয়ে আসছি, বলে স্থায়ী ঠিকানার বিল দেখাতে হবে! জোনালের কাছে বিচার দিতে গেলাম। ওই বস করোনায় নাকি আক্রান্ত। কবে আসবে ঠিক নাই। পাঠালো “লোকমান” নামক একজনের কাছে। উনি ইশারায় বলেন, ওদের খুশি করে দেন গা…এই সুযোগে পল্টন থেকে আসা মাহমুদ জানান, আমার সন্তানের সনদ কারেকশনে আসছি। আজ কয়টা দিন অফিস বাদ দিয়ে ঘুরতেই আছি ভাই। এরাই জানে না কোন কাজ কই হয়। আমাকে পাঠাইছে প্রেস ক্লাবের পিছনে পরিবহনের কি একটা অফিসে? তারাও রাগ করে ওদের বলেছে- কি যে করেন আপনারা, এটা কি জন্ম নিবন্ধন করার অফিস? আবার আসি তিলপাপারার অফিসে।
শেষে আমাকে এরা পাঠায় ডিসি অফিস। ওখানে গিয়ে সব বুঝে এই যে আজকেও দেখেন, এইটা ওইটা কত কি করা লাগে?
অভিযোগ শুনলে, বললে, তো শেষ হবে না? হবে না কোন সমাধান?
মারুফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি