লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে মাহমুদুল্লাহ-তামিম-মাশরাফি মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। এই হারে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লে-অফে খেলার আশা ঝুলেই রইলো ঢাকার।
লিগের সব অর্থাৎ ১০ ম্যাচ শেষে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে ঢাকা। তাদের সাথে প্লে-অফে দৌড়ে আছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও খুলনা টাইগার্স। তাদের পয়েন্ট সমান নয় ম্যাচে সমান ৮ পয়েন্ট করে।
কাল সিলেট সানরাইজার্সের মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম। আর কুমিল্লার মুখোমুখি হবে খুলনা। কাল চট্টগ্রাম-খুলনার এক দল নিজেদের খেলায় হেরে গেলেই প্লে-অফ খেলবে ঢাকা। আর দু’দল জিতলে, লিগ পর্ব থেকে এবারের বিপিএল শেষ হবে ঢাকার। আজকের জয়ে ১০ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট এককভাবে টেবিলের শীর্ষে বরিশাল। ৯ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে কুমিল্লা। বরিশাল-কুমিল্লার প্রথম কোয়ালিফাইয়ার নিশ্চিত।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এ ম্যাচেও একাদশের বাইরে ছিলেন পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা।
আগের ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দলকে জয় এনে দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা মোহাম্মদ নাইমকে নিয়ে ঢাকার ইনিংস শুরু করেন ইনফর্ম তামিম ইকবাল।
এ ম্যাচেও ব্যর্থ হয়েছেন নাইম। দ্বিতীয় ওভারে বরিশালের বাঁ-হাতি পেসার শফিকুল ইসলামের বলে সাকিব আল হাসানকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৯ বলে ৬ রান করা নাইম।
নাইম ফিরলেও ব্যাট হাতে মারমুখী মেজাজেই ছিলেন তামিম। শফিকুলের করা চতুর্থ ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। পরের ওভারে জহিরুলকে হারায় ঢাকা। আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হন ২ রান করা জহিরুল।
নাজমুল হোসেন শান্তর করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি আদায় করে নেন তামিম। এক প্রান্ত দিয়ে তামিম ব্যাটে রানের চাকা ঘুড়লেও, অন্যপ্রান্তে দিয়ে ঢাকাকে চাপে ফেলে দেন বরিশালের ডোয়াইন ব্রাভো ও অধিনায়ক সাকিব।
ঢাকার দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটার মাহমুদুল্লাহ ও শামসুর রহমানকে দুই অংকের কোটা স্পর্শ দেননি ব্রাভো-সাকিব। মাহমুদুল্লাহ ৩ রানে ব্রাভোর ও শামসুর একই রানে সাকিবের শিকার হন। এরমাঝেও ব্যাট হাতে অবিচল ছিলেন তামিম। জয়ার করা ১০তম ওভারের প্রথম তিন বলে ৩টি বাউন্ডারি মারেন তিনি।
৬৮ রানের মধ্যে ৪ উইকেট পতনের পর ছয় নম্বরে নামা শুভাগত হোমকে নিয়ে দলের স্কোর ১০০ পার করেন তামিম। সেই সাথে নিজের মুখোমুখি হওয়া ৩৮তম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৪৪তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম।
তামিমের হাফ-সেঞ্চুরির পর ঢাকার বোলারদের উপর চড়াও হন শুভাগত। ব্রাভোকে দু’টি চার ও সাকিবকে ১টি ছক্কা মারেন শুভাগত।
আর ১৬তম ওভারের শফিকুলের বলে ১টি করে চার-ছক্কা আদায় করেন তামিম। কিন্তু ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে পেসার মেহেদি হাসান রানার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তামিম।
৫০ বলে ৮ চার ১ ছক্কায় ৬৬ রান করেন এবারের আসরে বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তামিম। শুভাগতর সাথে পঞ্চম উইকেটে ৩৭ বলে ৪১ রান যোগ করেন তামিম। এটিই ঢাকার ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি।
তামিমের আউটের পর দুই আফগানিস্তানী আজমতউল্লাহ ওমারজাই ২ ও কায়েস আহমেদ ৮ রানে আউট হন। দু’টি উইকেট ভাগাভাগি করেছেন ব্রাভো ও রানা।
স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে শেষ দিকে উইকেটে ছিলেন শুভাগত। তাই তার দিকে চেয়েছিল ঢাকা। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে শেষ ওভারে দু’টি ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়েছিলেন শুভাগত। কিন্তু আজ শেষদিকে কিছুই করতে পারেননি তিনি।
তামিমের বিদায়ের পর ৮ বল খেলে মাত্র ২ রান নিতে পারেন শুভাগত। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে রুবেল হোসেনের ছক্কায় ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৮ রান তুলে ঢাকা। ২৭ বল খেলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন শুভাগত।
বরিশালের বোলারদের কিপটে বোলিংয়ে শেষ ৪ ওভারে ২৩ রান তুলতে পারে ঢাকা। বরিশালের শফিকুল-ব্রাভো-রানা ২টি করে উইকেট নেন। মুজিব-সাকিবের ১টি করে শিকার ছিল।
১২৯ রানের সহজ টার্গেটে শুরুটা ভালো করার চেষ্টা করেছিলেন বরিশালের দুই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। ৪ ওভারে ২৩ রান তুলেছিলেন তারা। এরমধ্যে শাহরিয়ার ২টি চার ও ১টি ছক্কা এবং গেইলের ১টি চার ছিল।
পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে গেইলকে বিদায় দেন পেসার শফিউল ইসলাম। ১১ বলে ৭ রান করেন ইউনিভার্স বস। অনপ্রান্তে ব্যাট হাতে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন শাহরিয়ার। পঞ্চম ওভারে রুবেলকে চার মারার পর পঞ্চম ওভারে কায়েসের প্রথম চার বলে দু’টি ছক্কা মারেন শাহরিয়ার। তবে পঞ্চম ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে শামসুরকে ক্যাচ দেন দারুন খেলতে থাকা শাহরিয়ার। ৩টি করে চার-ছক্কায় ২৫ বলে ৩৭ রান করেন শাহরিয়ার।
৪৬ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন শান্ত ও সাকিব। শান্ত বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুললেও, ম্যাচ শেষ করার তাড়া ছিলো সাকিবের। তার ব্যাটিং চিত্র তেমনটাই বলেছে পরবর্তীতে। ১২তম ওভারে আজমতউল্লাহকে ৪টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন সাকিব। ওই ওভারে রান উঠে ২৩। ১৪তম ওভারে শফিউলকেও ছক্কা মারেন তিনি।
আর ১৫তম ওভারে ফারুকির তৃতীয় বলকে সীমানা ছাড়া করে এবারের আসরের তৃতীয় ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। হাফ-সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ২৯ বল লেগেছে সাকিবের।
সাকিবের হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়ার বাউন্ডারিতেই ঢাকার রানকে স্পর্শ করে বরিশাল। আর পরের ডেলিভারি ওয়াইড হলে ২৭ বল বাকী রেখে জয়ের স্বাদ নেয় বরিশাল।