২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১০:৪৫
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / সকাল ১০:৪৫

হঠাৎ পিয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। চাল, ডাল ও তেল সবকিছুর দামই লাগামছাড়া। এতে ক্রেতাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এর মধ্যে আবার হঠাৎ করে পিয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কেজিতে ৩০ টাকা বিক্রি হওয়া পিয়াজ চলতি সপ্তাহে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সামনে পিয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ক্রেতাদের। এদিকে আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। সবজির মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে লাউ।

বাজারে একটি লাউয়ের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। তেলের দামও নিয়ন্ত্রণে আসেনি এখনো। ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে ভোক্তাদের।
শুক্রবার রাজধানীর বেশকিছু বাজারে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহে কেজিতে ৩০ টাকা বিক্রি হওয়া পিয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়িয়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাল্লায় (পাঁচ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। খুচরা বিক্রেতা বলছেন, পাইকার থেকে বেশি দামে তাদের পিয়াজ কিনতে হয়েছে। তাই তারাও দাম বাড়িয়েছেন। পিয়াজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ পিয়াজ মজুত রাখতে বেশি করে কিনছেন। রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে ১০ কেজি পিয়াজ নিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা ইউসুফ হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর এই সময় আসলেই পিয়াজের দাম বাড়ে। কয়েকদিন আগেও এক কেজি পিয়াজ ৩৫ টাকা দিয়ে কিনেছি। আজ ৫০ টাকা দাম চাইছে। সামনে যদি আরও দাম বাড়িয়ে দেয়, তাই বেশি করে পিয়াজ নিচ্ছি। হঠাৎ দাম বৃদ্ধিতে উষ্মা প্রকাশ করে আরেক ক্রেতা বেলায়েত খান জানান, বাজারে এখন সবকিছুর দামই লাগামছাড়া। এ নিয়ে কারও কোনো নজরদারি নেই। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।
খুচরা বাজারে বর্তমানে আলুর দামই কম। শীত শেষ হয়ে গেলেও সবজির দামের চড়ামূল্য নামেনি। এ সপ্তাহে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া প্রতিকেজি শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা, লাউ আকারভেদে ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতিকেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা ও মটরশুঁটি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে।
সবজির চড়া দামের সঙ্গে চলতি সপ্তাহে মুরগির দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে কেজিতে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মুরগির সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন মুরগি ব্যবসায়ীরা। তবে সরবরাহ বাড়লে এই দাম আবার  নেমে আসবে বলেও জানান তারা।
বেশ কিছুদিন ধরেই ভোজ্য তেলের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা, বোতলজাত ১৬৮ টাকা, সরিষার বোতলজাত ২৯০ টাকা, খোলা পাম অয়েল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। তেল ছাড়া বাজারে চালের দামও কিছুটা বেড়ে সরু চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৬ টাকায়, মাঝারি আকারে চাল (আটাশ) ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা আর চিনিগুড়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
নিজাম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, প্রতি শুক্রবার বাজার করতে আসলেই দেখি কিছু না কিছুর দাম বাড়ে। একবার দাম বাড়লে তা আর কখনো কমতে দেখি না। আমাদের তো এভাবে আয় বাড়ে না। করোনার জন্য অফিস থেকে নানা অজুহাতে আরও আমাদের বেতন কাটা হয়। আর বাজারে আসলে সবকিছুই দেখি বেশি দামে কিনতে হয়।
এসব বাজারে মাঝারি আকারের (এক কেজি ওজন) ইলিশ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা ও ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, রুই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, শিং ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার রংপুর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিত্যপণ্যে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, অনেক অসৎ ব্যবসায়ী সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই এখন থেকে ট্যারিফ কমিশন নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছি। ভারত ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করতে হয়। এবার পিয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা বলছেন, তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। প্রতি কেজি পিয়াজের উৎপাদন খরচ পড়ে ১৪ টাকা, আর বিক্রি করছে ১৬ থেকে ১৮ টাকা। সে কারণে বিদেশ থেকে আপাতত পিয়াজ আমদানি করতে নিষেধ করেছেন কৃষকরা।

Facebook
Twitter
LinkedIn