গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত সবার বিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে, সেজন্য প্রত্যেক দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হবে। তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। জনগণই তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।’ গতকাল সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী হেলপ সেল আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন গণতন্ত্র থাকে না, তখন সবকিছুই অসাড় হয়ে যায়। তখন এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। তাই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। এ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে। এ সরকার দেশটাকে একটা ভয়াবহ নরকে পরিণত করেছে।’ বিরোধী দলের ওপরে সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোর্টে যখন যাই, সেখানে গিয়ে অন্য কোনো লোককে খুঁজে পাই না, সব আমাদের লোক। এমন অনেকে আছেন তারা নেতাও নন। যারা হয়তোবা সমর্থক তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে অসংখ্য মামলা। চলছেই সেই ধারাবাহিকতা, এখনও বন্ধ হয়নি। এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং তুলে নিয়ে গেছে ও গুলি করে হত্যা করেছে বা পঙ্গু করে দিয়েছে।’
পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আশা করি, এই অন্ধকার কেটে যাবে। মানুষ জেগে উঠছে, জেগে উঠবে ইনশাল্লাহ। আমাদের অগণিত তরুণ-যুবক যারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই অন্ধকারের অবসান ঘটাবে এবং সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে। আসুন আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাই, ঐক্যবদ্ধ হই, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করি। এই ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের সরকার একটা মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করি।’
গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের দিকে তাকিয়ে আবেগপ্রবণ কণ্ঠে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই পরিবারগুলোর (গুম হওয়া পরিবার) দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়। কেন এই শিশুরা যন্ত্রণা পাচ্ছে? তারা শুধু মানসিক নয়, তারা আর্থিক দিক থেকেও অত্যন্ত কষ্টে আছে। এমন পরিবার আছে যে, ওই বাচ্চাটার লেখাপড়ার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে গেছে, চিকিৎসার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে গেছে। আমরা তো তাদের পাশে ঠিক সেভাবে দাঁড়াতে পারিনি। আমি আশা করি, এই বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্বসহ বিবেচনা করে তাদের জন্য যেন আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারি, যে তহবিলের মধ্য দিয়ে অন্তত বাচ্চাদের লেখাপড়ার বিষয়টা দেখা যেতে পারে। আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত নেব।’
গুম ও নির্যাতিত পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা একা নও। তোমাদের পাশে সারাদেশ আছে, সারাদেশের মানুষ আছে।’
সংগঠনের সদস্য তানভীর আহমেদ রবিনের সভাপতিত্বে ও মামুন খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির আবদুস সালাম, এবিএম মোশাররফ হোসেন, ডা. রফিকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাঈদ আহমেদ জুয়েল বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে গুম-খুন-নির্যাতিতদের মধ্যে সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, ছাত্রদলের নুরুল আলম নূরুর মেয়ে উম্মে হাবিবা মীম, পারভেজ রেজার মেয়ে হƒদি, স্বেচ্ছাসেবক দল কাউসার আহমেদের মেয়ে লামিয়া আখতার মীম ও পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন তাদের বেদনার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে গুম-খুন-নির্যাতিত ১৫ পরিবারের শিশুদের মধ্যে ‘শহীদ নুরুল আলম উপবৃত্তি’ দেয়া হয়।