২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ১২:৪৫
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / দুপুর ১২:৪৫

যেভাবে ছড়ায় জলবসন্ত, কী করবেন?

গ্রীষ্মকালে কিছু মৌসুমী রোগ দেখা দেয়।  এই সময়ে যে রোগটি বেশি ভোগায় সেটি হচ্ছে জলবসন্ত বা চিকেনপক্স। বছরের যে কোনো সময়ই এ রোগ হতে পারে, তবে গরমকালে বা শীত-গরমের তারতম্যের সময় এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। 

ছোট বড় সবারই জলবসন্ত হতে পারে, সাধারণত ১-৫ বছরের শিশুদের বেশি হয়।  এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন। 

জলবসন্ত একটি ভাইরাস জীবাণুবাহিত রোগ। ভ্যারিসিলা জোসটার ভাইরাসের দ্বারা মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজন সদস্য আক্রান্ত হলে অন্যরাও সংক্রমিত হয়। তবে রোগ সম্পর্কে সচেতন হলে এবং কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে সহজেই এর সংক্রমণ প্রতিহত করা যায়। 

সাধারণত দেহের চামড়ায় পানিফোসকা ওঠার পাঁচ দিন আগে থেকে সর্বশেষ চামড়ায় ফোসকা শুকানোর বা বিলুপ্তির পরবর্তী পাঁচ দিন পর্যন্ত এ জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জলবসন্তের জীবাণু যেভাবে ছড়ায় 

* বাতাসের মাধ্যমে।

* আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যা করার সময় মুখে মাস্ক বা গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত।

* আক্রান্ত ব্যক্তির চামড়ার ফোসকা বা ঘায়ের রস থেকে।

* আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড় থেকে।

লক্ষণ

দেহে জীবাণু প্রবেশের ১৪ থেকে ১৬ দিনের মাথায় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে এ জীবাণু দেহের মধ্যে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। লক্ষণগুলো নিম্নরূপ-

* প্রথম পর্যায়ে জ্বর হয়, যা ১০২-১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।

* জ্বর হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেহের চামড়ায় ফোসকা পড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে ফোসকাগুলো লাল লাল গুটি আকারে বের হয় এবং পরে তা পানিফোসকার আকার ধারণ করে। এ ফোসকা প্রথম দিকে মাথায় বের হয় এবং পরে তা বুক, পিঠ, হাত, পা, মুখ বা মুখগহ্বরসহ দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফোসকাগুলো এ অবস্থায় এক-দুই দিন থাকার পর ধীরে ধীরে কালো বর্ণ ধারণ করে এবং সাত দিনের মাথায় শুকিয়ে যায়। অনেক সময় ফোসকাগুলো ফেটে গিয়ে আক্রান্ত স্থানে ঘা হয়।

* মাথা বা শরীরে ব্যথা হতে পারে।

* খাবারে অরুচি হয়।

* শারীরিক দুর্বলতা বোধ হয়।

* ফোসকার স্থানে চুলকানির অনুভূতি হয়।

* মুখের ভেতর ফোসকা হলে খাবার গ্রহণের সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

পরিচর্যা

এ অসুখের সময় শিশুর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তাকে নরম হালকা সুতি কাপড় পরাতে হবে। তরল বা নরম জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। বেশি করে পানি পান করাতে হবে। এর সঙ্গে অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। বেশিরভাগ সময়ই এ রোগ বাড়িতে সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হয়ে যায়। তাই হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে কোনো কারণে জলবসন্ত যদি বেশি মাত্রায় ছড়ায় বা ইনফেকশন তৈরি করে তবে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়তে পারে। বাড়িতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন।

* যেহেতু ফোসকার স্থানে চুলকানির অনুভূতি হয়, তাই এ অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে ক্যালামিন লোসন লাগানো যায়।

* প্রতিদিন গোসল করতে হবে। এতে চুলকানি কমবে বা ফোসকার স্থানে ময়লা জমা প্রতিহত হবে।

* মাথা বা শরীরে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

* মুখের ভেতর ফোসকা হলে নরম বা তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

* প্রচুর পানি বা পানিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

* অতিরিক্ত ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

* আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরিবারের অন্যান্য সদস্য থেকে নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ফোসকা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। প্রয়োজনে তার জন্য আলাদা ঘর, আলাদা কাপড়-চোপড়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

* শেষ ফোসকা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির বাইরে যাওয়া বা আক্রান্ত বাচ্চার স্কুলে যাওয়া বা আক্রান্ত ব্যক্তির অফিসে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

* যে কোনো মূল্যে ফোসকা ফাটানো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আক্রান্ত স্থানে চুলকানো যাবে না।

* প্রতিদিন আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড় ও বিছানার চাদর অ্যান্টিসেপটিকযুক্ত গরম পানিতে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

জটিলতা

উপযুক্ত সময়ে সঠিক পরিচর্যা বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এ রোগ কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে না। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটলে কোনো কোনো সময় এ রোগ নিম্নরূপ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

* চামড়ায় ঘা বা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত।

* ফুসফুসে সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া।

* মস্তিষ্কে সংক্রমণ বা ভাইরাল এনকেফালাইটিস।

* পুরুষাঙ্গে সংক্রমণ বা অরকাইটিস, ইত্যাদি।

প্রতিরোধে করণীয়

বর্তমানে আমাদের দেশে এ রোগের প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিন অতি সহজেই পাওয়া যায়। তাই সবারই উচিত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করে আনাকাঙ্ক্ষিত এ রোগের হাত থেকে শিশুকে ও নিজেকে দূরে রাখা।

Facebook
Twitter
LinkedIn