২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৫:৫২
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ / ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি / বিকাল ৫:৫২

জানুয়ারি থেকে বছরে দুই সেমিস্টার

আগামী বছরের শুরু থেকেই দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিন সেমিস্টারের পরিবর্তে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এরই মধ্যে এ সিদ্ধান্তের কথা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান বাড়ানো, যেনতেনভাবে কোর্স শেষ করার প্রবণতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে হাতেকলমে শেখানোর দক্ষতা বাড়ানো এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য বলে ইউজিসি জানিয়েছে।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ওমর ফারুখ গতকাল সমকালকে বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হবে। এতে শিক্ষার মান বাড়বে। শিক্ষার্থীরা প্রায়োগিক দিকগুলোতে দক্ষতা অর্জন করবে।

তিনি আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে মাত্র একবার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে বিষয়গুলো আত্মস্থ রপ্ত করার সময় দেওয়া হয়। উন্নত দেশগুলোতে বছরে ‘স্প্রিং’ ও ‘ফল’ এ দুটি সেমিস্টার। আর আমাদের দেশে বছরে তিনটি- স্প্রিং, ফল ও উইন্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রতি চার মাসে একটি সেমিস্টার। একটি সেমিস্টারের পাঠ ভালোভাবে রপ্ত করার আগেই আরেকটি চলে আসে। এভাবে চাকরি বাজারে শিক্ষার্থীরা গিয়ে দক্ষতায় পিছিয়ে পড়ে। আবার প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীকে নতুন করে ভর্তি হতে হয় বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে যার মতো করে পড়াচ্ছে। এ জন্যই আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড গাইড লাইন অনুসরণ করতে দুই সেমিস্টারে পড়াতে বলছি।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, মূলত বাণিজ্যিক কারণেই প্রাইম সেমিস্টার পদ্ধতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ দেশে চালু করেছে। কেবল বাজার ও বাণিজ্যমুখী বিষয়গুলোকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো চাকরির বাজারে গুরুত্বপূর্ণ বা চাহিদাসম্পন্ন, সেগুলোই পড়ানো হয়। বাংলা, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি এমনকি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মতো বিষয়ও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বহীন। এসব কারণেও সেমিস্টার কমাতে চায় ইউজিসি। কারণ বাণিজ্যনির্ভর বিষয়গুলোর পাঠে কোনো ‘নৈতিক’ ও ‘আদর্শিক’ বিষয় থাকে না।

এ ব্যাপারে বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সমকালকে বলেন, তিনি বরাবরই সেমিস্টার পদ্ধতির বিপক্ষে। আগের ইয়ার সিস্টেমই ভালো ছিল। একজন শিক্ষার্থী চার বা ছয় মাসে মাত্র দুটি কোর্স পড়বে। স্বাভাবিক কারণে তারা প্রচুর অবসর সময় পাবে। এতে কেউ কেউ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ নানা অপতৎপরতায় জড়াবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই পুরো পদ্ধতিরই খোলনলচে পাল্টে ফেলা জরুরি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতির লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েও অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন দুই সেমিস্টার পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়ে এর আগে কয়েক দফা সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল। তবে এবার কমিশন এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর নতুন যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোতে শুরু থেকেই দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দিয়েছে।

ইউজিসি একই সঙ্গে পূর্ণকালীন প্রোগ্রামে নূ্যনতম চারটি কোর্স-সংবলিত বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর কথা বললেও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চারটি কোর্স পড়ানোর জন্য ইউজিসির প্রস্তাবটি ভুল। ছয় মাসে একটি সেমিস্টার হলে প্রতি সেমিস্টারে কমপক্ষে ছয়টি কোর্স পড়াতে হবে। নইলে তো চার বছরে অনার্স শেষ হবে না। পাঁচ বছর লেগে যাবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn