বাঁকা পথে সরাসরি তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলেও পুঁজিবাজারে আসার ব্যাপারে হাল ছাড়েনি বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। বহুল আলোচিত কোম্পানিটি এবার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে বাজারে আসতে চায়।সংগ্রহ করতে চায় ২৫০ কোটি টাকা। তবে নির্দিষ্ট মূল্য পদ্ধতির আইপিও নয়; বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওতে বাজারে আসতে আগ্রহী তারা।
জানা গেছে, আইপিওতে আসার লক্ষ্যে কোম্পানিটি ইতোমধ্যে ইস্যু ম্যানেজার নিযোগ করেছে। শান্তা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান শান্তা ইক্যুইটি লিমিটেড বেস্ট হোল্ডিংসের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
সম্প্রতি শান্তা গ্রুপের পুঁজিবাজার অপারেশনসের প্রধান আরিফ খান সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উর্ধতনদের সাথে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে তারা বেস্ট হোল্ডিংসকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
তবে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইপিওর আবেদন জমা দেওয়া হয়নি বিএসইসিতে। কবে নাগাদ এই আবেদন জমা হতে পারে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
এর আগে ২০২০ সালের শেষ ভাগে বেস্ট হোল্ডিংস (লা মেরিডিয়ান হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান) সরাসরি তালিকাভুক্তি পদ্ধতির আওতায় পুঁজিবাজারে আসার উদ্যোগ নিয়েছিল।
কোম্পানিটি ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে সরাসরি তালিকাভুক্তির আবেদন করেছিল। বিদ্যমান আইনে বেসরকারি খাতের কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তির সুযোগ না থাকলেও কোম্পানিটি অর্থমন্ত্রীর দেওয়া একটি চিঠি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপনকে সামনে রেখে তালিকাভুক্তির কাজ শেষ করতে চেয়েছিল।
বেসরকারি খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সহজ অর্থায়ন এবং বিনিয়োগ ঝুঁকি কমাতে ঋণের পরিবর্তে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মূলধনি বিনিয়োগ এবং শেয়ারবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে আইনি বিধিবিধান শিথিল করার সুপারিশ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
এর আগে একই বছরের জুলাই মাসে বেসরকারি খাতের অবকাঠামো প্রকল্প ও প্রকল্প সংশ্নিষ্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগ বা ইক্যুইটি এক্সপোজার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাজারে তারল্য সৃষ্টি, বিনিয়োগের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং ঝুঁকি কমিয়ে আনতে নীতিমালা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্তৃক এমন ইক্যুইটি এক্সপোজার গৃহীত হয়ে থাকলে সার্কুলার জারির ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারাবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকল্পের পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রথম বছরে তালিকাভুক্ত করা যাবে।
বেস্ট হোল্ডিংসের প্লেসমেন্ট শেয়ারে থাকা চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিনিয়োগকে দেখিয়ে কোম্পানিটি নিজেদের সরকারি কোম্পানি হিসেবে দেখিয়ে তালিকাভুক্তির বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির একটি আবেদন ডিএসইর পর্ষদ সভায় বিবেচনার জন্য উঠার কথা ছিল।প্রতিটি ১০ টাকা দামের শেয়ারে ৫৫টা প্রিমিয়াম ধরে ৬৫ টাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে পুঁজিবাজারে থেকে ২৮৩ কোটি টাকা তারা তুলেতে চেয়েছিল কোম্পানিটি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির হস্তক্ষেপে সেটি আর হয়ে উঠেনি।
২০১৬ সালে বিএসইসির জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সরকারি কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তির সুযোগ না থাকায় বেস্ট হোল্ডিংসকে তালিকাভুক্তি সুযোগ না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিএসইসি। অন্যদিকে ওই নির্দেশনা জারির ঠিক একদিন পরে অবকাঠামো প্রকল্পকে সরাসরি তালিকাভুক্ত করা সংক্রান্ত চিঠির কার্যকারিতা বাতিল করে অর্থমন্ত্রণালয়।