সাকিব আহমেদ
যুগ্ম আহ্বায়ক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজ শাখা, বলেছেন
স্বপ্নের পদ্মা সেতু কে ঘিরে হাজারো মানুষের পথচলা শুরু হতে যাচ্ছে আজ ২৫ জুন, ২০২২। আজকের তারিখটি প্রত্যেকটি বাঙালির জন্য এক অবিস্বরণীয় দিন হয়ে থাকবে। পদ্মার পাড়ে আজ লাখো মানুষের অনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের এই সেতু। আগামী কাল ২৬ জুন সকাল ৬ টা থেকে এই সেতু সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। পদ্মা সেতু তে ঘুরতে যেতে চায় না এমন কোন মানুষ নেই। স্বপ্নের এই কাঠামো একটু সামনে থেকে দেখতে হাজারো বাঙালী অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ শুরু হয়। কিন্তু তার আগে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন উক্তি-কটূক্তি, আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু যখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় তখন পাঠকদের সামনে সেই আলোচিত উক্তি-কটূক্তি, আলোচনা-সমালোচনা গুলো তুলে ধরা হচ্ছে।
২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনায় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।
এরপর ওই বছর (২০১৮) ১২ জানুয়ারি পল্টন কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের ওপরে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো উনি (খালেদা জিয়া) ভুল বলেননি। বরং তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন। তোমরা এখন এলার্ট হও, চেঞ্জ দ্য ডিজাইন এবং সেটা সঠিকভাবে নির্মাণ হতে হবে।
ফখরুল বলেন, এটা সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, পদ্মা সেতু একটা রং ডিজাইনের ওপরে নির্মিত হচ্ছে। এটা আমাদের কথা নয়, এটা বিশেষজ্ঞদের কথা। তারা বলছেন, ড্রিল মেশিন যে পর্যন্ত যায়, তার অনেক নিচে দেয়া দরকার ছিলো। এখন যে নকশা করা হয়েছে যার ভিত্তিতে দুইটা পিলার নির্মাণ করতে পেরেছে এটা ঠিকই আছে। বাকীগুলো টিকছে না। কারণ স্লাইডিং মাড নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে ওখানে পিলার দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে না। এটা আপনার ইঞ্জিনিয়ারদের কথা।
এরপর ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি এবং স্বচ্ছতার সামান্যতম ঘাটতিও ছিলো না।
পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করালো ড. ইউনূস। কেনো? গ্রামীণ ব্যাংকের একটি এমডি পদে তাকে থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুনেছি, সে (ইউনূস) আর মাহ্ফুজ আনাম আমেরিকায় যায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারি ক্লিনটনকে ই-মেইল করে। মি. জোয়েলিক সে সময় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার শেষ কর্মদিবসে, কোনো বোর্ডসভায় নয়, পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেন।
চলতি বছর ২১ মে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংক তাদের সহযোগিতার হাত ফিরিয়ে নিয়েছিলো। তারা চলে গেলেও আমরা আমাদের টাকা দিয়েই পদ্মা সেতু করেছি। জুন মাসেই চন্দ্রালোকিত পূর্ণিমা রাতে পদ্মা সেতুতে দাঁড়িয়ে বাংলার মানুষ পূর্ণিমার চাঁদ দেখবে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, তরুণ প্রজন্মের মেট্রোরেল তো হয়েই গেলো। ফখরুল সাহেব এবার কী বলবেন?
এরপর পদ্মা সেতু যখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় তখন গত ২৩ মে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আজকে শেখ হাসিনা- তিনি পদ্মা সেতু করার বড়াই করছেন। আমরা বলতে চাই, পদ্মা সেতু আপনার একার না, আওয়ামী লীগের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। জনগণের পকেটের টাকা থেকে যে ট্যাক্স কেটে নিয়েছেন, সেই জনগণের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে।
এর আগে, ২১ মে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াতের সময় জনগণ সেতুতে আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটের কথা স্মরণ করবে।
এদিকে, চলতি বছরের ২১ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে পদ্মা সেতু। শত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুরকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও কঠোর নির্দেশনার কারণে শত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা সৎভাবে পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। পদ্মা সেতুর কাজ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রতি বিশ্বাস রেখে ব্যাংক চেক প্রদান করেছেন। যে কারণে আমরা কোনো সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুত কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছি।