সরকারকে বর্গিদের সরকার বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা এখন বর্গির ভূমিকা পালন করছে।
সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জ্বালানি বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বর্গিদের সরকার। আমি ছোটবেলায় গান শুনতাম, মা ঘুম পাড়াতেন ভয় দেখিয়ে—ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গি এলো দেশে। আজকে এরা (ক্ষমতাসীন দল) সেই বর্গির ভূমিকা পালন করছে। আমাদেরও বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর জন্যে গান গাইতে হবে যে, আওয়ামী লীগ এলো দেশে—এই কথা বলে।
তিনি বলেন, শুধু জ্বালানি খাত কেন? সমস্ত খাতকে, বাংলাদেশের কোনো খাত বাকি রাখেনি। আপনারা দেখেন কিছুদিন আগে কোভিডের সময় কীভাবে মানুষের জীবন নিয়ে, স্বাস্থ্য নিয়ে তারা দুর্নীতি করেছে। আপনারা দেখেছেন উত্তরায় গার্ডার পড়ে গিয়ে কীভাবে পাঁচজনের জীবন গেল, সেতু ও সড়ক খাতে দেখবেন সারাদেশে প্রতিদিন কত মানুষ মারা যাচ্ছে দুর্ঘটনায়।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম, ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল, ২ লাখ মা-বোনদের সম্ভ্রম চলে গিয়েছিল— এই দেশকে দেখার জন্য নয়। আমরা একটা স্বাধীন-সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক সমাজ দেখতে চেয়েছিলাম, একটা মুক্ত উদার গণতন্ত্রের মধ্যে আমরা বাস করতে চেয়েছিলাম। আজকে এরা কী করেছে? এরা সম্পূর্ণভাবে দেশটাকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, কোথাও কথা বলতে পারবেন না, কোথাও লিখতে পারবেন না, কোথাও যেতে পারবেন না। এমনকি গতকালকে প্রধানমন্ত্রী ধমক দিয়েই বলেছেন যে, কী আহ্লাদ নির্বাচন করবেন। ভাবখানা এরকম যে, আপনারা আবার নির্বাচন করবার কে!
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতকাল ওই জায়গায় (২১ আগস্টের ঘটনাস্থলে) তিনি (প্রধানমন্ত্রী) গেছেন। ওখানে তিনি অনুষ্ঠান করেছেন, স্মরণ করেছেন, ওখানে চারদিকে ঘিরে দিয়ে। একেবারে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, এত টেন্সড (উদ্বিগ্ন) থাকতে হচ্ছে কেন? বার বার একথা বলছেন কেন, আবার সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে, চক্রান্ত হচ্ছে? তাহলে কি দেশ আপনারা ১৫/১৬ বছরে ধরে চালালেন এবং বললেন যে, টেররিজমকে আপনারা উধাও করে দিয়েছেন। সেখানে আবার সেই চিন্তা আসছে কেন? এরা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যার মধ্য দিয়ে, প্রতারণার মধ্য দিয়ে, জনগণকে বোকা বানিয়ে এই দেশটাকে চালাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চয় দেখছেন, এখন মানুষ কিন্তু নিজেরাই জেগে উঠতে শুরু করেছে। শেখ সুমন নামে একজনকে থানায় নিয়ে বলা হয়েছে যে, সে আত্মাহত্যা করেছে। কিন্তু আসলে তাকে অত্যাচার-নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে। জনগণ আজকে নিজেরাই রাস্তা দখল করেছে, থানা ঘেরাও করেছে। আজকে রাস্তায় বের হয়ে এসেছে আমাদের চা শ্রমিকরা ন্যূনতম দাবি নিয়ে, ৩০০ টাকা। সেখানে কিন্তু ১০ হাজার/১২ হাজার টাকা বেতনও তাদের আসে না। একদিকে ২৮০০ টাকার পার ক্যাপিটা ইনকাম, আরেক দিকে ১২০ টাকা বেতন। এই যদি দেশ হয়, এই যদি একটা সমাজ হয়, এই যদি একটা অর্থনৈতিক হিসাব হয় তাহলে সেই স্বাধীনতার কোনো মূল্য আছে বলে আমার মনে হয় না।
আবারো সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘দুর্নীতি জ্বালানি সংকটের উৎস’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রবন্ধে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষমতাসীনদের লুণ্ঠনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় সেমিনারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বিএনপির সেলিমা রহমান, ইসমাইল জবিউল্লাহ, মশিউর রহমান, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, সেলিম ভুঁইয়া, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সারফত আলী সপু, শাহ নেসারুল হক, তাইফুল ইসলাম টিপু, আকরামুল হাসান, শায়রুল কবির খান, রুমিন ফারহানাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।